শনির বলয়ের বয়স সৌরজগতের সমসাময়িক

শনির বলয়ের বয়স সৌরজগতের সমসাময়িক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

বলয় বিহীন শনিগ্রহ আমরা কল্পনা করতে পারিনা। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীতে ডায়নোসররা যখন ঘুরে বেড়াত, তখন তাদের মাথার ওপর ন্যাড়া শনিগ্রহ ঘুরত। ২০০৪ সালে ক্যাসিনি প্রোব যখন এই গ্রহ অধ্যয়ন করতে যায়, তা জানায় বরফের চাঁই, কণা দিয়ে তৈরি এই বলয় বেশ স্বচ্ছ। বিজ্ঞানীরা এতে অবাক হন, কারণ কয়েকশো কোটি বছর ধরে উল্কাপিণ্ডের বর্ষণে বলয় ধূলোর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকার কথা। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করেন, গ্রহ গঠনের অনেক পরে মাত্র ১০ থেকে ৪০ কোটি বছর আগে বলয় তৈরি হয়েছে। এটাও বলা হয়ে থাকে, যে শনির বলয় ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে। ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স টোকিও এবং ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের গবেষকরা জানিয়েছেন, শনির বলয়গুলো যথেষ্ট প্রাচীন। কীভাবে বলয়ের মধ্যে বরফ স্বচ্ছ থাকতে পারে তার পরিষ্কার ব্যাখ্যাও তারা দিয়েছেন। সৌরজগতের অন্যান্য বড়ো গ্রহ বৃহস্পতি, ইউরেনাস, নেপচুনে বলয় দেখা যায়, তবে তা শনির মতো এত স্পষ্ট নয়।
মহাশূন্যের ঠান্ডা বায়ুশূন্য স্থানে উচ্চ গতিতে ধূলিকণাকে বরফে পরিণত করলে কী ঘটে তা দেখার জন্য গবেষকরা তাত্ত্বিক মডেলিং পরিচালনা করেন। গবেষকরা বলেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উল্কা কণা, আকারে ১০০ মাইক্রনেরও কম, শনির শক্তিশালী মহাকর্ষীয় টানে শনির চারপাশে আটকে যাচ্ছে। বরফের যে খণ্ডগুলো বলয় তৈরি করে সেগুলো কিছুটা বড়ো আকারের, কয়েক সেন্টিমিটার থেকে মিটার পর্যন্ত। প্রতি সেকেন্ডে ২৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ভ্রমণকারী কণা বরফকে দূষিত করার পরিবর্তে বরফের খণ্ডে আঘাত করলে, এর প্রভাবে যে তাপ উৎপন্ন হয় তা ক্ষুদ্র উল্কাপিণ্ড ও বরফের পৃষ্ঠের ক্ষুদ্র এলাকা উভয়কেই বাষ্পীভূত করে। এর মধ্যে কিছু ন্যানো পার্টিকেলে ঘনীভূত হয়, বাকিটা পরমাণু ও অণুতে পরিণত হয়। ন্যানো-কণা, পরমাণু, অণুগুলো শনির চারপাশে প্লাজমা পরিবেশে তড়িতযুক্ত হয়ে যায়; একবার তড়িতযুক্ত হয়ে গেলে, শনির চৌম্বক ক্ষেত্র চার্জযুক্ত ন্যানো-কণা আর আয়নগুলোর কক্ষপথকে প্রভাবিত করে। ক্ষুদ্র উল্কা কণার উপাদান থেকে বলয় ধোঁয়ায় ভরে যেতে পারে। কিন্তু ন্যানোকণা আর আয়ন হয় শনিগ্রহে ধাক্কা খায় অথবা এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে বা মহাকাশে বেড়িয়ে যায়। মূলত এই কারণে বলয় কখনও ধূলোয় অন্ধকার আচ্ছন্ন থাকে না। অর্থাৎ, শনির বলয়গুলো কোটি কোটি বছরের পুরনো হতে পারে। গবেষকরা এও জানাচ্ছেন, শনির বলয়গুলো ভবিষ্যতে আরও বেশিদিন থাকবে। ক্যাসিনির তত্ত্ব থেকে জানা গেছে, শনির বলয় থেকে গ্রহের ওপর প্রচুর পরিমাণে জল পড়ছে, যা প্রতি আধ ঘন্টায় একটা অলিম্পিক পুল পূরণ করতে পারবে। তারা জানিয়েছেন, বলয় বৃষ্টির কারণ হল ক্ষুদ্র উল্কাখণ্ডের গ্রহে বর্ষণের ফলে উৎপন্ন বাষ্পীভূত জল, যা শনিগ্রহের বুকে ঝরে পড়ে। এই গবেষণা নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।