শরীরের অভ্যন্তরে অণুজীবের জগৎ

শরীরের অভ্যন্তরে অণুজীবের জগৎ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ আগষ্ট, ২০২৩

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট বা পৌষ্টিক তন্ত্রে বসবাসকারী বেশিরভাগ মাইক্রোব বা ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র জীবই উপকারী। মানুষের অন্ত্রে যে জীবাণু থাকে তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব রয়েছে যা বর্তমানে গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। আর এই জীবাণু -অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার এবং ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে বিষণ্নতা, আলজাইমার রোগ এবং মানুষের চলাফেরা জনিত বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে যুক্ত। যদিও গবেষকরা অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম সম্পর্কে বহু কিছু আবিষ্কার করেছেন তবুও এমন অনেক কিছু রয়েছে যা এখনও অজানা – এবং কিছু ভুল ধারণাও রয়েছে যা সংশোধন করা প্রয়োজন।
মাইক্রোবায়োম নিয়ে গবেষণা নতুন নয়; কমপক্ষে উনিশ শতকের শেষের দিকে মানুষের অন্ত্রে প্রথম ব্যাকটেরিয়ার নমুনা আবিষ্কৃত হয়েছিল। শরীরের অন্ত্র এবং মস্তিষ্কের মধ্যে যে রহস্যময় সংযোগ রয়েছে তা নিয়েও বহু বছর ধরে গবেষণা করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে যে এই সংযোগটি উভয় দিক থেকেই কাজ করে। পূর্বে মানুষের দেহের এই মাইক্রোবায়োটার মোট ওজন অনুমানিক ১ থেকে ২ কিলোগ্রাম বলে গণনা করা হয়েছিল কিন্তু ওয়াকার এবং হোয়েলস হিউম্যান মাইক্রোবায়োটার ওজন গণনা করে দেখেন যে সেটি সম্ভবত ৫০০ গ্রাম বা তার কম ওজনের। তাদের এই সংশোধিত অনুমান একটি মানুষের মলের গড় ওজন ( প্রায় ২০০ গ্রাম) এবং তাতে কত পরিমাণ অণুজীব রয়েছে (প্রায় অর্ধেক) এবং বৃদন্ত্রের ওজনের উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়েছে।
আরেকটি সাধারণ ধারণা হল যে শিশুরা জন্মের সময় তাদের মায়ের কাছ থেকে তাদের মাইক্রোবায়োটা জন্মসূত্রে পেয়ে থাকে। যদিও কিছু অণুজীব সরাসরি জন্মের সময় মায়ের থেকে শিশুর মধ্যে আসে, তবে গবেষণা বলছে যে কয়েকটি প্রজাতি সারা জীবন আমাদের সঙ্গে থাকে। মায়ের মাইক্রোবায়োটা তার বাচ্চার স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি ঘটাতে পারে, কিন্তু আমাদের খাদ্যাভ্যাস, অ্যান্টিবায়োটিক, জিনের বৈশিষ্ট এবং আমাদের পরিবেশ আমাদের মাইক্রোবায়োমের গঠন নির্ধারণ করে। একই পরিবারে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও দুই যমজ সন্তানের দুটি স্বতন্ত্র মাইক্রোবায়োটা রয়েছে।
সবশেষে যে ধারণাটি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায় তা হল একজন ব্যক্তির অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের পরিবর্তন সেই ব্যক্তির অসুখের উপর প্রভাব ফেলে কিনা। গবেষকদের পক্ষে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলা মুশকিল কারণ এই ধরনের পরিবর্তন খুব একটা ধারাবাহিক নয় এবং ব্যক্তি বিশেষে মাইক্রোবায়োটা স্বতন্ত্র। একজন ব্যক্তির বয়স, বিএমআই, ওষুধ, সেইসাথে তার বিপাকীয় প্রক্রিয়া এবং শরীরের ইমিউন সিস্টেম মাইক্রোবায়োটার গঠনকে প্রভাবিত করে সুতরাং পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় সম্ভাব্য কারণ এবং প্রভাবের সম্পর্ককে বোঝা কঠিন করে তোলে।