আমাদের হঠাৎ কখনও মনে হয়, শরীরে যেন কী একটা ঘটে গেল, সব যেন ভেঙেচুরে অন্যরকম হয়ে গেল। এটা কিন্তু আমাদের অলীক কল্পনা নাও হতে পারে। স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের গবেষণা বলছে একবার ৪০এর কোঠায় আর একবার ৬০এর কোঠায় আমাদের শরীরের নানা অণু, অণুজীব আচম্বিতে কমে বা বেড়ে যায়। নেচার এজিং-এ প্রকাশিত গবেষণায় জানানো হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের হাজার হাজার অণু, নানা মাইক্রোবায়োম আমাদের শরীরের ভেতরে, বা ত্বকে বাস করে। গবেষকরা ২৫-৭৫ বছর বয়সী মানুষের শরীরে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ছত্রাকের মূল্যায়ন করে দেখেছেন যে বেশিরভাগ অণু, জীবাণু ধীরে ধীরে, কালানুক্রমে স্থানান্তরিত হয় না। বরং, আমাদের জীবনকালের দুটো সময়ে আমাদের শরীর দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, একটা হল গড়ে প্রায় ৪৪ বছরে আর একটা ৬০ বছরে।
এই বড়ো পরিবর্তনগুলো সম্ভবত আমাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। কার্ডিওভাসকুলার রোগের সাথে সম্পর্কিত অণুর সংখ্যা এই দু বয়সেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখায়। আর ৬০ -এর কোঠায় মানুষের ইমিউন ফাংশনের সাথে সম্পর্কিত অণুগুলো পরিবর্তিত হয়। গবেষকরা আণবিক ও অণুজীবের হঠাৎ পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বলছেন, বয়সজনিত রোগ বছরের পর বছর ধরে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করেনা। অ্যালজাইমার্স বা হৃদযন্ত্রের সমস্যাজনিত ঝুঁকি বয়স্ক অবস্থায় বেড়ে যায়। ১০৮ জন মানুষের তথ্য থেকে গবেষকরা ‘এজিং’ বা বয়স হওয়ার জৈব কারণ বুঝতে চেয়েছেন। এর আগে চার ধরনের ‘এজোটাইপ’ পাওয়া গিয়েছিল। যা দেখিয়েছিল, মানুষের কিডনি, লিভার, বিপাকীয় অবস্থা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার এজিং বিভিন্ন মানুষে আলাদা।
ষাট বছর বয়সে মানুষের শারীরিক পরিবর্তন বিশেষ আশ্চর্যজনক নয় কিন্তু গবেষকরা ৪০ বছরে নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যে এই পরিবর্তন দেখে অবাক হয়েছেন। চল্লিশোর্দ্ধ মানুষের মধ্যে, অ্যালকোহল, ক্যাফিন ও লিপিড বিপাক সংক্রান্ত অণুর সংখ্যায়, কার্ডিওভাসকুলার রোগে, ত্বক ও পেশিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেছে। ষাটোর্দ্ধ ব্যক্তিদের কার্বোহাইড্রেট ও ক্যাফিন বিপাকে, ইমিউন নিয়ন্ত্রণে, কিডনির কার্যকারিতায়, কার্ডিওভাসকুলার রোগে, ত্বক ও পেশির পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। গবেষকদের মতে এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে কিছু জীবনধারা বা আচরণগত কারণের সাথে যুক্ত হতে পারে। এই পরিবর্তনের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ভবিষ্যতে গবেষকরা কাজ করবেন। কিন্তু তাদের পরামর্শ হল এই দু সময়ে মানুষের নিজের শরীরের দিকে নজর দেওয়া দরকার, খাওয়া দাওয়ার নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম করা প্রয়োজন আর অ্যালকোহল সেবন কম করা ভালো।