শিশুদের একজিমা, হাঁপানি, খাদ্য অ্যালার্জি, হে ফিভার -এর মতো অ্যালার্জির উৎস এক

শিশুদের একজিমা, হাঁপানি, খাদ্য অ্যালার্জি, হে ফিভার -এর মতো অ্যালার্জির উৎস এক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (ইউবিসি) এবং বিসি চিলড্রেনস হাসপাতালের গবেষকদের নেতৃত্বে এক গবেষণা অনুসারে শৈশবে বেশ কিছু প্রধান অ্যালার্জির কারণ হল আমাদের অন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া। নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে ২৯ শে আগস্ট প্রকাশিত গবেষণাতে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম বৈশিষ্ট্য এবং এতে শৈশব জীবনের প্রভাব থেকে দেখা গেছে শিশুদের চারটি সাধারণ অ্যালার্জি – একজিমা, হাঁপানি, খাদ্য অ্যালার্জি অথবা হে ফিভারের সাথে মাইক্রোবায়োমের সম্পর্ক আছে৷ এই গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যাবে, ভবিষ্যতে শিশুর অ্যালার্জি হবে কিনা বা অ্যালার্জি যাতে না হয় সেই উপায়ের আশ্রয় নেওয়া যাবে। কানাডায় প্রতি তিনজনের মধ্যে একটি শিশু সহ বিশ্বব্যাপী কয়েক মিলিয়ন শিশু অ্যালার্জিতে ভুগছে এবং কেন এটি ঘটছে এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায় তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের একবারে চারটি স্বতন্ত্র অ্যালার্জি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে এই গবেষণায়। যদিও এই অ্যালার্জিজনিত রোগগুলোর প্রত্যেকটার আলাদা আলাদা লক্ষণ রয়েছে, কিন্তু শিশুর অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা তাদের একটা সাধারণ উত্স হতে পারে কিনা তা এখানে দেখা হয়েছে।
গবেষকরা জন্ম থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত ১১১৫ জন শিশুর ক্লিনিকাল পরীক্ষা। প্রায় অর্ধেক শিশুর ((৫২৩জন) কোনো সময়ে অ্যালার্জি হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া না গেলেও বাকি শিশুদের (৫৯২ জন) এক বা একাধিক অ্যালার্জিজনিত রোগ হয়েছিল। গবেষকরা তিন মাস থেকে এক বছর বয়সে ক্লিনিকাল পরিদর্শনে সংগৃহীত মলের নমুনা থেকে শিশুদের মাইক্রোবায়োমগুলো মূল্যায়ন করেছেন। মলের নমুনাগুলিতে এমন ব্যাকটেরিয়া দেখা যাচ্ছে যা পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে চারটি অ্যালার্জির মধ্যে যে কোনও একটার বিকাশের সাথে যুক্ত ছিল। ব্যাকটেরিয়া থেকে ডিসবায়োসিস বা ভারসাম্যহীন অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটার বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে, যার ফলে সম্ভবত অন্ত্রের আস্তরণে সমস্যা ও তাতে অন্ত্রে একটা প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
সাধারণত দেখা যায় শরীরের অন্ত্রে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। শরীর ইমিউন কোশ ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে একটি শক্তিশালী বাধা তৈরি করে প্রদাহজনক সংকেতগুলো সীমিত করে যা ইমিউন কোশগুলোকে কাজ করার জন্য সংকেত পাঠায়। গবেষণায় অ্যালার্জি হওয়ার আগে শিশুদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে ভাঙ্গন দেখা যায়।
শিশুর অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা গঠনের জন্য দায়ী নানা কারণ হল, খাদ্যাভ্যাস, আমরা কীভাবে জন্মগ্রহণ করি, কোথায় থাকি এবং অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া। অ্যান্টিবায়োটিক সংবেদনশীল ব্যাকটেরিয়া নিশ্চিহ্ন করতে পারে, আবার মাতৃদুগ্ধ পান করলে শিশুর অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার পুনরুৎপাদন হয়। গবেষকরা এই পরীক্ষায় দেখেছেন যে এই ধরনের প্রভাব ও অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটার ভারসাম্য কীভাবে অ্যালার্জি হওয়ার সাথে যুক্ত।
এই তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণায় বলা হচ্ছে জীবনের প্রথম বছরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে পরবর্তীতে অ্যালার্জিজনিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেক্ষেত্রে প্রথম ছমাস মায়ের দুধ খাওয়ানো সুরক্ষামূলক। তাদের গবেষণার অধীনে সমস্ত অ্যালার্জিজনিত ব্যাধির ক্ষেত্রে এটি সর্বজনীন ছিল। এখন গবেষকরা ভারসাম্যহীন অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা সংশোধন করা এবং সম্ভাব্য অ্যালার্জির বিকাশকে প্রতিরোধ করতে পারে এমন চিকিত্সার জন্য ফলাফলগুলো কাজে লাগানো যাবে এই আশা করেন।