শৌখিন শব্দ নয়, চলতি কথা

শৌখিন শব্দ নয়, চলতি কথা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ এপ্রিল, ২০২৫

বিদেশি ভাষা শেখার সময় প্রায়ই শৌখিন, পরিশীলিত শব্দ ব্যবহারকে সাবলীলতার মাপকাঠি ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শুঙ্গো সুজুকি এবং তাঁর পিএইচ ডি ছাত্র কোতারো তাকিজাওয়া অন্য কথা বলছেন। তাঁরা ১০২ জন জাপানির ইংরেজি ভাষা প্রয়োগ-পটুত্ব বিশ্লেষণ করেছেন। এঁদের প্রত্যেককে একটা করে বিতর্কমূলক ভাষণ দিতে বলা হয়েছিল। সেইসব ভাষণ থেকে দুই ও তিন-শব্দযুক্ত পর্যায়গুলো পরপর কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা হিসেব করা হয়। কথ্য ছন্দের সাবলীলতা, উচ্চারণের হার, যতি, ভুলের স্বয়ং-সংশোধন প্রভৃতি বিষয়ও বিচার করা হয়। কে কত সাবলীল তা বোঝবার জন্য প্রচলিত কথা বা অভিব্যক্তিগুলির প্রভাব আলাদা করে বিশ্লেষণ করেন তাঁরা। বক্তাদের ভাষা ব্যবহারের সাবলীলতা বিচার করেন দশজন অভিজ্ঞ ভাষা-বিচারক। স্টাডিজ ইন সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাকুইজিশন পত্রিকায় ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। এ থেকে দেখা গেছে, শ্রোতার কাছে গড়গড় করে কথা বলা, অর্থাৎ মসৃণতাই হল সাবলীলতা বিচারের সবচেয়ে বড়ো মাপকাঠি। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ৬১% হেরফের হয়ে যায় এরই দরুন। বাঁধাধরা অভিব্যক্তিগুলো ঘনঘন প্রয়োগ করলে সাবলীলতা বিচারের ক্ষেত্রে ০.৮% সুবিধা লাভ করা যায়। সে তুলনায় জটিলতর অভিব্যক্তিগুলির অবদান কার্যত শূন্য। এই সমীক্ষা থেকে বোঝা যাচ্ছে, কার ভাষা কত সাবলীল তার বিচার পরিশীলিত শব্দ ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে না, করে সঠিক অভিব্যক্তি প্রয়োগের ওপর। তাকিজাওয়া বলেছেন, ‘আমরা দেখলাম বিরল, পরিশীলিত অভিব্যক্তিগুলির তুলনায় প্রতিদিনের সাধারণ প্রয়োজনে ব্যবহৃত অভিব্যক্তিগুলিই বক্তার সাবলীলতা বিচারের ক্ষেত্রে বড়ো ভূমিকা পালন করে’। কিন্তু চিরাচরিত ধারণা অনুযায়ী, বরাবরই কথা বলার স্বচ্ছন্দ গতি এবং নিরবচ্ছিন্নতাকেই সাবলীলতা বিচারের মাপকাঠি ধরে নেওয়া হত। দৈনন্দিন ব্যবহার্য বাঁধাধরা অভিব্যক্তিগুলোর ভূমিকা এক্ষেত্রে কী সে-ধারণা এতদিন স্পষ্ট ছিল না। বিদেশি ভাষা শিক্ষা ও সেই শিক্ষার মূল্যায়নের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ বিচারকরা কিন্তু বক্তা কতটা স্বাভাবিক ও মসৃণভাবে কথা বলছেন তাই দিয়েই বিচার করেন। TOEFEL, IELTS প্রভৃতি মান্য পরীক্ষাগুলির ক্ষেত্রে তো একথা বিশেষভাবে সত্য। সুজুকি বলেছেন, বিদেশি ভাষা শিক্ষা করার ক্ষেত্রে ঝোঁকটা পড়া উচিত সাধারণ প্রচলিত অভিব্যক্তি ব্যবহারের ওপর। তবেই একজন শ্রোতার কাছে বক্তা সাবলীল বলে বিবেচিত হবে। ‘সাধারণভাবে দেখা যায়, ভাষা শিক্ষক আর ভাষা শিক্ষার্থী উভয় পক্ষই বিরল, কঠিন কঠিন অভিব্যক্তিগুলিকেই ভাষিক দক্ষতার পরিচায়ক বলে গণ্য করেন। কিন্তু বর্তমান গবেষণা থেকে এটাই বেরিয়ে আসছে যে শিক্ষার্থীরা যদি শ্রোতাকে নিজের সাবলীলতা দ্বারা প্রভাবিত করতে চান তাহলে ওগুলিকেই আবশ্যিক মাপকাঠি ধরে নেওয়া ঠিক নয়’। বিদেশি ভাষার পরীক্ষায় যেহেতু সাবলীলতার উপর নম্বর দেওয়া হয় তাই এ বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা-পরীক্ষকদের উচিত মুখের কথার মসৃণতার সঙ্গে স্বাভাবিক চালু অভিব্যক্তি ব্যবহারের পটুতার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
সূত্র: Waseda University. “Common pfrases, not fancy words, make you sound more fluent in a foreign language”, ScienceDaily, 3 April 2015.

http://www.sciencedaily.com/releases/2025/04/250403122822.htm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + 12 =