শ্রেষ্ঠত্বের গন্ধবিচার

শ্রেষ্ঠত্বের গন্ধবিচার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ মে, ২০২৫

ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা একটি আকর্ষণীয় আবিষ্কার করেছেন। আধিপত্য জাহির করার জন্য ইঁদুরদের শব্দ বা শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয় না, ঘ্রাণই সব বলে দিতে পারে । তারা কেবল শারীরিক শক্তি বা আকারের উপর নির্ভর করে না, বরং তারা গন্ধের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের প্রাধান্য বোঝে।
গবেষকরা একটি “টিউব টেস্ট” পরিচালনা করেন। সেখানে একটি সংকীর্ণ নলে দুটি ইঁদুর বিপরীত দিক থেকে প্রবেশ করে, মাঝপথে গিয়ে মিলিত হয়। দেখা যায় একটি ইদুর পিছু হঠে আসে, অপরটি আধিপত্য বিস্তার করে সামনের দিকে এগিয়ে যায় । যেন মনে হয় গন্ধবাহিত এক নিঃশব্দ যোগাযোগ।
ইঁদুরেরাও সামাজিক শ্রেষ্ঠত্বের একটি ক্রম অনুসরণ করে, যা মানুষের মতোই। কেউ নেতৃত্ব দেয়, কেউ অনুসরণ করে, আর কেউ সবসময় মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন যে এই বিশেষ বৈশিষ্ট শারীরিক আগ্রাসন বা নির্দিষ্ট আচরণ থেকে উদ্ভূত হয়। কিন্তু কারেন্ট বায়োলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।
গবেষকরা এই আশ্চর্য বিষয়টিকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। যেমন অন্ধকারে পরীক্ষাটি করার পর দেখা গেছে যে, ইঁদুর দৃষ্টিশক্তির উপর নির্ভর না করেই প্রভাবশালী প্রতিপক্ষকে চিনতে পারে। এমনকি যখন গবেষকরা ইঁদুরের যৌন হরমোন অপসারণ করেন, তখনও তাদের প্রভাবশালী অবস্থান অপরিবর্তিত থাকে। দেখা গেছে,সুগন্ধি সংকেত সংঘাত এড়াতেও সাহায্য করে।একটি প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের ঘ্রাণ চেনার দ্বারা ইঁদুরেরা পিছু হঠতে এবং আঘাত এড়াতে পারে। এই ঘ্রাণভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা শুধু শৃঙ্খলাই বজায় রাখে না, শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কাও কমায়।
একটি আকর্ষণীয় পরীক্ষা করে গবেষকরা নিম্নতর ইঁদুরদের গায়ে প্রভাবশালী শ্রেণির ইঁদুরের প্রস্রাব লাগিয়ে তাদের সামাজিক অবস্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম হন। এটি প্রমাণ করে যে গন্ধ একটি শক্তিশালী সামাজিক সংকেত প্রদান করে। ইঁদুররা দুটি রাসায়নিক সংবেদনশীল ব্যবস্থা ব্যবহার করে যা শ্রেণিবিন্যাস নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উভয় ব্যবস্থাই বন্ধ করলে ইঁদুররা সামাজিক অবস্থান শনাক্ত করতে পারে না ।
এই গবেষণার ফলাফল মানব সমাজের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যদিও মানুষ গন্ধের চেয়ে বেশি দৃষ্টিলব্ধ ও মৌখিক সংকেত ব্যবহার করে, তবুও সামাজিক অবস্থান নির্ধারণের প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে ইঁদুরের মতোই হতে পারে।গবেষকরা ভবিষ্যতে আরও বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছেন, বিশেষ করে কীভাবে বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ সামাজিক অবস্থানের সংকেত বহন করে এবং কীভাবে মস্তিষ্ক এই তথ্য ব্যাখ্যা করে।
এই গবেষণা প্রমাণ করে যে গন্ধ সামাজিক সম্পর্ককে রূপান্তরিত করতে পারে, এবং এটি আমাদের নিজস্ব সামাজিক গতিশীলতা বোঝার জন্য একটি নতুন দৃষ্টিকোণ উন্মোচন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 1 =