সঙ্গীত ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারে

সঙ্গীত ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ অক্টোবর, ২০২৪

সমীক্ষা জানাচ্ছে আমাদের ভারতবর্ষে ষাট বছরের বেশি বয়সী মানুষদের মধ্যে প্রায় ৮৮ লক্ষ ব্যক্তি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। চিকিৎসকরা মনে করেন এর কারণ, রোগ নিয়ে সচেতনতার অভাব এবং অবহেলা। তাদের আশঙ্কা, ২০৫০ সালের মধ্যে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন বর্তমানের প্রায় তিন গুণ বেশি মানুষ। ডিমেনশিয়া মানে স্মৃতি লোপ পাওয়া। প্রয়োজনীয় জিনিস এক জায়গায় রেখে ভুলে যাওয়া, কারও নাম ভুলে যাওয়া, কোনও জিনিস আনতে গিয়ে ভুলে যাওয়া এই সব ভুল আমরা করে থাকি। কিন্তু, চেনা রাস্তা ভুল করা, বাজারে গিয়ে হিসাব জানা মানুষটির হিসাবে ভুল করা, চেক লিখতে ভুলে যাওয়া, ঘরের চৌহদ্দিতে দিক ভোলা- এসবই ইঙ্গিত দেয় মারাত্মক এই রোগের।
আমরা বহুদিন ধরেই জেনে এসেছি চিকিৎসাক্ষেত্রে সঙ্গীত ব্যবহৃত হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ইঁদুর দৌড়ে আমাদের মনকে প্রশান্তি দেয়, ঘুমোতে সাহায্য করে। ক্যান্সারের চিকিৎসা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসা এমনকি স্ট্রোকের পরে মস্তিষ্ক পুনরুদ্ধারেও সহায়তা করতে কার্যকরী সঙ্গীত। গবেষকরা সম্প্রতি ডিমেনশিয়া রোগীদের সাহায্য করার জন্য সঙ্গীত ব্যবহার করে আশাব্যাঞ্জক ফল লাভ করেছেন। সঙ্গীত রোগীদের উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা হ্রাস করে এবং প্রতিকূলতা বা চাপের সাথে মানিয়ে নেওয়া ও তা মোকাবিলা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মিউজিক থেরাপি জ্ঞানীয় ক্রিয়াকলাপেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে – বিশেষ করে সেই সব বয়স্কদের জন্য যাদের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিশক্তির সমস্যা রয়েছে। প্রায় এক দশক আগে, গবেষকরা আবিষ্কার করেছিলেন যে আমরা যখন গান শুনি, তখন মস্তিষ্কের একাধিক অঞ্চল এটি প্রক্রিয়াকরণে জড়িত থাকে। যেমন লিম্বিক অঞ্চল যা আবেগ এবং স্মৃতি প্রক্রিয়াকরণ করে, জ্ঞানীয় বা বৌদ্ধিক অঞ্চল যা উপলব্ধি, শিখন ও প্রতিক্রিয়া দেখাতে সাহায্য করে, এবং মোটর অঞ্চল যা ঐচ্ছিক পেশি নড়াচড়ায় সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই গবেষণায় দেখা গেছে যে সঙ্গীত মস্তিষ্ক এবং তার সংযোগগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করতে পারে। গবেষকদের মতে সঙ্গীত ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিগ্রস্থ নিউরাল সংযোগ এবং কোশকে মেরামত বা শক্তিশালী করে সাহায্য করতে পারে। তবে মাথায় রাখতে হবে যে কোনও সঙ্গীত হলে চলবে না। পরিচিত এবং প্রিয় সঙ্গীত আমাদের অনুভূতির উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে এবং স্মৃতি এবং আবেগের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকে। এমন কথাই জানিয়েছে এই গবেষণা। এর কারণ হল আমাদের প্রিয় গান শোনার ফলে এমন হরমোন নির্গত হয় যা আমাদের ভালো অনুভূতি, আনন্দের অনুভূতি দেয়। প্রিয় সঙ্গীত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চাপ মোকাবিলা করার মূল চাবিকাঠি হতে পারে। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন মস্তিষ্কের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সঙ্গীতের স্মৃতির সাথে যুক্ত মস্তিষ্কের অংশ অ্যালজাইমার এবং ডিমেনশিয়ার দ্বারা কম প্রভাবিত হয়। ফলে প্রিয় সঙ্গীতের সাথে যুক্ত স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতা প্রায়শই এই ধরনের ব্যক্তিদের অক্ষত থাকে। বিকেলে বা সন্ধ্যায় যখন এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আরও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন তখন গান বাজনা শোনা তাদের কষ্ট, রাগ প্রশমিত করতে সাহায্য করে। মনোরোগ চিকিৎসকরা তাই উদ্বেগ বিষণ্ণতা থেকে বেরিয়ে আসতে সঙ্গীতের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 5 =