সজীব কৌতূহল বার্ধক্য ঠেকায়

সজীব কৌতূহল বার্ধক্য ঠেকায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ মে, ২০২৫

সম্প্রতি ইউ সি এল এ-র এক গবেষণায় দেখা দেছে, কয়েক ধরণের কৌতূহল বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধি পেতে পারে, যা বজায় রাখতে পারলেই ভালো। যাঁরা আগ্রহের সাথে প্রাসঙ্গিক নতুন জিনিস শিখতে চেষ্টা করেন, তাঁদের আলঝাইমারের মতন স্নায়ুরোগের ঝুঁকি কম। এমনকি তাঁরা এই রোগটি প্রতিরোধও করতে পারেন। অপরদিকে, যাঁরা অনাগ্রহে থাকেন, তাঁদের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি থাকতে পারে।
আগে জানা ছিল, বয়স বাড়ার সাথে সাথে কৌতূহল হ্রাস পায়। কিন্তু এই গবেষণার পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী বৃদ্ধ ও প্রাপ্তবয়স্কদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে এই ফলাফল বেমানান। মনস্তত্ত্ববিদ অ্যালান ক্যাস্টেল, মেরি হোয়েটলি, কাউ মুরায়াম্মা এবং মিচিকো সাকাকি ভাবতে শুরু করলেন, হয়তো এই অমিলের উত্তরটি নিহিত আছে ভিন্ন এক ধরণের কৌতূহলের মধ্যে, যার নাম ‘অবস্থাগত কৌতূহল’ (স্টেট কৌতূহল)। কোনো মানুষকে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে তার মনে যে-তাৎক্ষণিক কৌতূহলের সঞ্চার হয় তাকে মনস্তত্ত্বে বলে ‘অবস্থানগত কৌতূহল’। অন্য ধরণের কৌতূহলটির নাম ‘স্বভাবগত কৌতূহল’ (ট্রেইট কৌতূহল)। কিছু কিছু মানুষ স্বভাবত খুব অনুসন্ধিৎসু নন, যা কিছু যেমন আছে তাতেই তাঁরা খুশী। অথচ দেখা যায় নির্দিষ্ট কোনো বিষয় সম্পর্কে কিংবা শখের বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভে তাঁদের উদগ্র আগ্রহ (অবস্থাগত কৌতূহল)। সব মানুষের মধ্যে এই দু ধরনের কৌতূহল থাকে, কোনোটা বেশি, কোনোটা কম।
এই দু ধরণের কৌতূহলকে আলাদা করে বোঝবার জন্য গবেষকরা ২০ থেকে ৮৪ বছর বয়সী (গড় বয়স ৪৪) বহু লোককে নিয়ে পরীক্ষা করেন। তাঁদের স্বভাবগত কৌতূহল কেমন তা যাচাই করবার জন্য অনলাইনে একটা প্রশ্নমালা দেওয়া হয়। এর পর তাঁদের অবস্থাগত কৌতূহল কতখানি তা যাচাই করবার জন্য এমন কতকগুলি টুকিটাকি প্রশ্ন করা হয় যার উত্তর চট করে জানা থাকার কথা নয়। যেমন, পৃথিবীর কোন দেশে প্রথম মেয়েদের নির্বাচনী অধিকার দেওয়া হয় । তাঁদের যা মনে হয় তাই বলতে বলা হয়। এবার জিজ্ঞেস করা হয় তাঁরা কি নির্ভুল উত্তরটি জানতে উৎসুক? (এক্ষেত্রে নিউ জিল্যান্ড)
বিশ্লেষণ থেকে বোঝা গেল, যাদের ‘অবস্থাগত কৌতূহল’ বেশি তাদের ‘স্বভাবগত কৌতূহল’ও বেশি। আবার উলটোটাও সত্যি। কিন্তু টুকিটাকি বিষয় থেকে নতুন তথ্য আহরণের ঔৎসুক্য-মাত্রা যাদের বেশি, দেখা গেছে তাদের যৌবনের প্রারম্ভে সেটা কিছুটা কমে আসে, তারপর মধ্যবয়স থেকে প্রবলভাবে বেড়ে চলে একেবারে বার্ধক্য পর্যন্ত। এর একটা কারণ হয়তো এই যে মধ্য বয়সে পৌঁছনোর আগে অবধি জীবনে সফল হবার জন্য লোকের জানবার আগ্রহ বেশি থাকে, তারা নৈপুণ্য অর্জন আর সুযোগের সন্ধানে রত থাকে। তবে তারই চাপে তাদের সার্বিক সুখানুভূতিতে ভাঁটা পড়ে। কিন্তু মধ্যবয়সে পৌঁছে তারা আর স্বভাবগত কৌতূহল মেটানোর জন্য খুব কিছু করার প্রয়োজন বোধ করে না। তখন ছেলেমেয়েদের নিজেদের সংসার হয়ে গেছে, নিজের অবসরজীবন শুরু হতে চলেছে। তখন বিশেষ বিশেষ শখ নিয়ে মেতে থাকবার ফুরসত মেলে, আর তখনই বাড়ে অবস্থাগত কৌতূহল। অনেক বয়স্ক মানুষ ছাত্র পড়াতে ফিরে যান, কেউ শখ নিয়ে মাতেন, কেউ-বা পাখি দেখেন। ক্যাস্টেন বলছেন, এই মাত্রার কৌতূহল যদি জাগিয়ে রাখা যায় তাহলে বয়স হলেও আমাদের মগজ ধারালো থাকবে। তাঁর গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যেসব তথ্য মানুষের কৌতূহলের সঙ্গে যুক্ত হয় না, সেগুলো মানুষ চটপট ভুলে যায়। স্মৃতিভ্রংশ রোগের গোড়ার দিকে রোগীরা অনেক সময় আগেকার প্রিয় জিনিসের প্রতি আগ্রহ হারায়।
এন আই এইচ এস-এর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অন এজিং, দ্য লেভারহাল্‌মে ট্রাস্ট আর আলেকজান্ডার ফন হুম্বোল্ট ফাউণ্ডেশনের যৌথ সহায়তায় এ গবেষণাটি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + sixteen =