সমাধানের পথে “সহস্রাব্দে”র সমস্যা

সমাধানের পথে “সহস্রাব্দে”র সমস্যা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ জুলাই, ২০২৫

৩৯ বছর বয়সী মাদ্রিদ-জাত গণিতবিদ জাভিয়ের গোমেজ সেরানো, মহাকায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ‘জায়ান্ট গুগল ডিপমাইন্ড-এর সাথে জোট বেঁধেছেন। হয়তো খুব শীঘ্রই আমাদের সকলের পরিচিত ন্যাভিয়ার-স্টোকস সমীকরণ সমাধানের চেষ্টা করা যাবে । এটি ‘সহস্রাব্দের সাতটি প্রধান সমস্যা’র মধ্যে একটি। এর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লে ইনস্টিটিউট এক মিলিয়ন ডলার পুরষ্কার দেয়। তথাকথিত ন্যাভিয়ার-স্টোকস অপারেশন নিয়ে গত তিন বছর ধরে ২০ জনের একটি দল বিক্ষিপ্তভাবে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গুগল ডিপমাইন্ড-এর প্রধান ডেমিস হাসাবিস, জানুয়ারিতে একটি সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তাঁরা সহস্রাব্দের প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে একটি সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন, তবে কোনটি তা উল্লেখ করেননি। “ আগামী দেড় বছরের মধ্যে একটি ফল দেখতে পাব” – তিনি বলেছিলেন। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গোমেজ সেরানো প্রথমবারের মতো এই অপারেশন সম্পর্কে জনসমক্ষে কথা বলেন।
এই চ্যালেঞ্জটি ঊনবিংশ শতাব্দীর দুই গণিতবিদ, ফরাসি হেনরি নাভিয়ার এবং আইরিশ জর্জ গ্যাব্রিয়েল স্টোকস স্বাধীনভাবে উপস্থাপন করেছিলেন যথাক্রমে ১৮২২ এবং ১৮৪৫ সালে। এ দুটিই হল জল, বায়ু প্রভৃতি ফ্লুইডের গতিবিধি বর্ণনা করার মূল সমীকরণ। তাপমাত্রা, সান্দ্রতা এবং ফ্লুইডের প্রাথমিক গতির উপর ভিত্তি করে, সমীকরণগুলি পরবর্তী মুহূর্তের গতি গণনা করে। আবহাওয়া, বিপর্যয়কর বন্যা, বিমান চলাচল বা মানুষের রক্ত প্রবাহ প্রভৃতি প্রাসঙ্গিক ঘটনাগুলির পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য এই সমীকরণগুলি অপরিহার্য। গোমেজ সেরানো পাঁচজন শিক্ষাবিদের একটি দলের সহ-পরিচালক। এঁরা হলেন তাইওয়ানের ভূ-পদার্থবিদ চিং-ইয়াও লাই এবং চীনের ইয়ংজি ওয়াং। এঁরা কুমেরুর গলন গণনা করার জটিল গাণিতিক মডেলের গবেষক। এছাড়া আছেন তিনজন গণিতবিদ: অস্ট্রেলিয়ান-ব্রিটিশ ট্রিস্টান বাকমাস্টার (সহ-পরিচালক), স্প্যানিশ গঞ্জালো কাও ল্যাবোরা এবং গোমেজ সেরানো স্বয়ং ।গবেষকরা একটি সিলিন্ডারের মধ্যে একটি ফ্লুইডের সিমুলেশন তৈরি করেছিলেন, যা কিছু প্রাথমিক পরিস্থিতিতে অনন্য (সিঙ্গুলারিটি) দশা ব্যক্ত করেছিল । এর সাথে শান্ত সমুদ্রে সুনামির ঘটনার একটি সাদৃশ্য পাওয়া যায়। গোমেজ সেরানোর দলটি এই সমাধানকে পরিমার্জন করতে এবং অনন্য (সিঙ্গুলারিটি) দশা কোথায় এবং কীভাবে তৈরি হয় তা বোঝার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল – মেশিন লার্নিং নিউরাল নেটওয়ার্ক – ব্যবহার করেছিল। তিন বছর আগে প্রকাশিত তাদের পরীক্ষার ফলটিকে এই বহুমূল্য সমস্যার আসন্ন সমাধানের একটি লক্ষণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী এই রহস্য সমাধানের জন্য আরও তিনটি দল সনিষ্ঠভাবে প্রতিযোগিতা করছে – ক্যালিফোর্নিয়ায় টমাস হাউ-র দল; মিশরীয় তারেক এলগিন্ডি এবং ইতালীয় ফেদেরিকো পাসকোয়ালোত্তোর তৈরি দল । গোমেজ খুব আশাবাদী এবং তাঁর মতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো এক সময়ে সমাধান আসবে। গবেষণার অগ্রগতি খুবই দ্রুত।

গোমেজ সেরানো গুগল ডিপমাইন্ডের সাথে আলফা-ইভল্‌ভ (Alpha-Evolve) নামক একটি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম নিয়েও কাজ করছেন। এটি অভূতপূর্ব কার্যকারিতার সাথে জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধানে সক্ষম। সেরানো এবং তাঁর আমেরিকান সহকর্মী টেরেন্স তাও (সেরা জীবিত গণিতবিদ হিসাবে বিবেচিত) চার মাস ধরে এক ডজন বিভ্রান্তিকর চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রোগ্রামটিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। ৭৫% ক্ষেত্রে এর গবেষণার ফলাফল মনুষ্যকৃত সেরা গবেষণার ফলাফলের সাথে মেলে। আরও ২০% ক্ষেত্রে, এ থেকে আরও উন্নত গবেষণার ফলাফল বেরিয়ে আসে। গোমেজ সেরানো হ্নিয়েছেন, সাফল্যের হার ৯৫%, যা স্পষ্টতই চিত্তাকর্ষক । গুগল ডিপমাইন্ডের প্রধান, ব্রিটিশ স্নায়ুবিজ্ঞানী ডেমিস হাসাবিস এবং তাঁর আমেরিকান সহকর্মী জন জাম্পার গত বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন AlphaFold2 তৈরির জন্য । এটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা যা ২০০ মিলিয়ন পরিচিত প্রোটিনের জটিল কাঠামোর পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। প্রোগ্রামটি কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা সম্পন্ন করে । আলফা-ইভলভ-ও (Alpha-Evolve) হয়তো সেরকমই কোনও নতুন দিশা দেখাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four + 11 =