নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষণা জানাচ্ছে একটা হালকা বিদ্যুৎ প্রবাহ সমুদ্র উপকূলের তটকে শক্তিশালী করতে পারে। এটা জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রতল বৃদ্ধির ফলে উপকূলের ক্ষয়কে ব্যাপকভাবে হ্রাস করতে পারবে। গবেষকরা জানিয়েছেন ঝিনুক, ক্ল্যামস মুসেলস, অন্যান্য খোলসে বসবাসকারী সামুদ্রিক জীব তাদের শক্ত খোলস বা শেল তৈরি করতে সমুদ্রের জলে দ্রবীভূত খনিজ ব্যবহার করে। গবেষকরা এই প্রাকৃতিক পদ্ধতির অনুসরণে সমুদ্রে দ্রবীভূত খনিজ প্রাকৃতিক সিমেন্টর মতো ব্যবহার করে সমুদ্রের জলে ভেজা বালির দানা আটকাতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু, কম্বোজ প্রজাতির মতো বিপাকীয় শক্তি ব্যবহার করার পরিবর্তে, গবেষকরা এই রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করেছিলেন। পরীক্ষাগারে হালকা বৈদ্যুতিক প্রবাহ সামুদ্রিক বালির গঠন পালটে তাদের পাথরের মতো কঠিন বস্তুতে পরিণত করেছে। গবেষকদের আশা এই কৌশল বিশ্বজুড়ে উপকূলভাগ রক্ষার জন্য কম খরচে এক টেকসই সমাধান হবে। নেচার কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট জার্নালে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৪০% এরও বেশি উপকূলীয় এলাকায় বাস করে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে, তটভূমির ক্ষয় এই সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। পরিকাঠামোর ক্ষতি, জমির ক্ষয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর কয়েকশো কোটি ডলার ক্ষতি হয়। এই ক্ষয় কমানোর জন্য বর্তমান পন্থা কার্যকরী হতে পারে। তীব্র বৃষ্টিপাত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পর্যন্ত, জলবায়ু পরিবর্তন এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যা ধীরে ধীরে উপকূলরেখাকে ক্ষয় করছে। ২০২০ সালে ইউরোপীয় কমিশনের যৌথ গবেষণা কেন্দ্রের সমীক্ষা অনুসারে, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ পৃথিবীর প্রায় ২৬% সমুদ্র সৈকত জলের তলায় চলে যাবে। এই সমস্যার মোকাবিলায় স্থানীয় সম্প্রদায় দুটো প্রধান পন্থা নেয়- সুরক্ষা কাঠামো, বাধা তৈরি করে জল আটকানো যেমন সমুদ্রের পাড়ে দেয়াল বানানো, বা সামুদ্রিক তটের স্তর শক্তিশালী করতে মাটিতে সিমেন্ট ইঞ্জেক্ট করা। এই কৌশল যতটা ব্যয়বহুল ততটা স্থায়ী কিন্তু নয়। সমুদ্রের ধারে পাথরের দেয়াল তুললে, ধীরে ধীরে নীচের বালি যখন খসে যাবে, তখন এই পাথরের বোল্ডারগুলো ভেঙে পড়বে। বালির মধ্যে ইনজেকশন দিতে গেল, প্রচুর চাপ ও যথেষ্ট পরিমাণে শক্তির দরকার লাগে। কিন্তু গবেষকদের বর্তমান গবেষণায় সমুদ্রের দ্রবীভূত খনিজ, আয়ন ২/৩ ভোল্টের বিদ্যুৎ প্রবাহে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কঠিন ক্যালসিয়াম কার্বোনেট পরিণত হয়। আর ৪ ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রয়োগে ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড, হাইড্রোমাগনেসাইট তৈরি হয়, যা বিভিন্ন পাথরের উপাদান। এগুলো বালির উপস্থিতিতে আঠার মতো কাজ করে বালিকণা আটকে তাদের পাথরের মতো শক্ত বানিয়ে ফেলে, যা কংক্রিটের তুলনায় বেশি মজবুত। গবেষকরা জানিয়েছেন সমুদ্রের দেয়ালের নিচে সমুদ্রতলকে শক্তিশালী করতে বা বালির টিলাগুলিকে স্থিতিশীল করতে এবং অস্থির মাটির ঢাল ধরে রাখতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা পরীক্ষাগারের বাইরে সমুদ্রের উপকূলে সরাসরি এর প্রয়োগ করে পদ্ধতির কার্যকারিতা দেখতে চান।