সাগর ভূমিকম্পের নজরদারি

সাগর ভূমিকম্পের নজরদারি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

সমুদ্রের গভীর তলদেশে ভূমিকম্প শনাক্ত করার যন্ত্র খুবই কম। ফলত সুনামি সৃষ্টিকারী ভূমিকম্পের প্রাথমিক কম্পন কিংবা পৃথিবীর ম্যান্টল ও কোরের ভিতর দিয়ে বহে যাওয়া সূক্ষ্ম ভূকম্প তরঙ্গ অনেক সময়ই ধরা পড়ে না। কিন্তু একই সমুদ্রতল জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে আরো এক প্রযুক্তি – বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট উপাত্ত বহনকারী ‘ফাইবার-অপটিক কেবল’। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিজ্ঞানীরা এই তারগুলিকে সমুদ্রতল সিসমোমিটারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছিলেন। এবার নোকিয়া বেল ল্যাবসের নেতৃত্বে একদল গবেষক সেই সম্ভাবণাকেই বাস্তবে পরিণত করেছেন। হাওয়াই থেকে ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত ৪৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি টেলিকম তারকে তারা কার্যত ৪৪,০০০টি ভূকম্প কেন্দ্রে রূপান্তরিত করেছেন পরস্পরের থেকে ১০০ মিটার ব্যবধানে। আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের বার্ষিক সভায় উপস্থাপিত এই কাজ, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন চিত্রায়ন ও সমুদ্রতলের নজরদারিতে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।পরীক্ষার সময় তারটি রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে আঘাত হানা ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প এবং পরবর্তী সুনামির দুর্বল সংকেতকেও শনাক্ত করতে পারে। এই পদ্ধতির ভিত্তি হলো ‘ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যাকুস্টিক সেন্সিং’ (ডি এ এস) প্রযুক্তি। ফাইবারের ভেতর দিয়ে আলো চলার সময় তার ক্ষুদ্র ত্রুটিও প্রতিফলিত হয়। ভূমিকম্প বা তরঙ্গ এলে সেই প্রতিফলনে সামান্য পরিবর্তন ঘটে, যা পরিমাপ করে কম্পনের মাত্রা ধরা যায়। সাধারণত সমুদ্রতলের তারের রিপিটারগুলি এই সংকেতকে দুর্বল করে দেয়। কিন্তু গবেষকরা দেখিয়েছেন, কেবলের ভেতরে থাকা ‘লুপ-ব্যাক’ ব্যবস্থার সাহায্যে প্রতিফলিত আলোকে উল্টো মুখে পাঠিয়ে আবার সেটিকে শক্তিশালী করা সম্ভব। উন্নত কম্পিউটিং ব্যবস্থা ব্যবহার করে দূরবর্তী অংশ থেকেও তথ্য উদ্ধার করা যায়।

এর সবচেয়ে বড় সুবিধা, এই প্রযুক্তির জন্য নতুন তার বসানোর দরকার নেই। বিদ্যমান বাণিজ্যিক তারে ইন্টারনেটে তথ্য চলাচলের চেয়ে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির লেজার পাঠালেই কাজ হয়। তাতে খরচও অনেক কম। তবে কিছু বাধাও আছে। সামরিক নিরাপত্তা, ডুবোজাহাজ চলাচল শনাক্ত হওয়ার আশঙ্কা এবং টেলিকম কোম্পানির গোপনীয়তা নীতির কারণে তথ্য ব্যবহারে জটিলতা তৈরি হতে পারে। তবুও বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। এই সেন্সর দিয়ে তিমির চলাচল, সমুদ্রস্রোত, টেকটোনিক প্লেটের বিচ্ছেদ বা ম্যান্টল থেকে উঠে আসা ম্যাগমার পথ আরও স্পষ্টভাবে দেখা যেতে পারে। গবেষকদের ভাষায়, সেন্সরগুলি ইতিমধ্যেই সেখানে আছে। আশা করা যায়, এভাবেই সুনামি বা বড় ভূ-কম্পের আগাম সতর্কতা জারি করে অনেক ক্ষয়- ক্ষতি আটকানো যাবে।

 

সূত্র: Seafloor telecom cable transformed into giant earthquake detector; Science; Dec, 2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =