সামগ্রীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

সামগ্রীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

‘সামগ্রী সংক্রান্ত এ আই’ (এ আই অব থিংস) আর ‘সামগ্রী সংক্রান্ত ইন্টারনেট’ (ইন্টারনেট অব থিংস), এই দুই প্রযুক্তির শক্তি একত্রিত করা সম্ভব হয়েছে। এতদিন ‘সামগ্রী সংক্রান্ত ইন্টারনেট’ (আই ও টি) সিস্টেমগুলিতে বিভিন্ন যন্ত্রকৌশলে ডেটা সংগ্রহ করে দূরের সার্ভারে পাঠানো হত প্রক্রিয়াকরণের উদ্দেশ্যে। এবার ‘সামগ্রী সংক্রান্ত এ আই’ যন্ত্রকৌশলে স্থানীয়ভাবেই ডেটার তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হবে। ফলে ওই মুহূর্তেই বুদ্ধিপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হবে। এই ক্ষমতার ব্যাপক প্রয়োগ ঘটছে, যথা বুদ্ধিযুক্ত উৎপাদনপ্রণালী, স্মার্ট গৃহ-নিরাপত্তা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য-পরিচর্যার ওপর নজর রাখা। গৃহ সংক্রান্ত প্রয়োগব্যবস্থাগুলিতে মানুষের কাজকর্মকে নিখুঁতভাবে চিনতে পারা চাই-ই চাই। এর দৌলতে ‘সামগ্রী সংক্রান্ত এ আই’ সিস্টেমগুলি রান্নাবান্না কংবা ব্যায়াম করার মতো কর্মকাণ্ডকে শনাক্ত করতে পারে। এইসব ডেটা বিশ্লেষণ করে সিস্টেমটি নিজে থেকেই আলো কমানো-বাড়ানো, বাজনা বাজানো, কাম্য মাত্রায় শক্তি ব্যবহার করতে পারে। যার ফলে স্বাচ্ছন্দ্য আর নৈপুণ্য দুটোই বাড়ে। চলাফেরা চেনার নানান উপায় আছে। তার মধ্যে ওয়াই-ফাই-এর ভিত্তিতে শনাক্ত করাটাই সবচেয়ে উপযোগী। কারণ এটা সহজলভ্য, শস্তা, আর ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা এতে সুরক্ষিত থাকে। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচিয়ন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি কলেজের অধ্যাপক গোয়াংগিল জেয়ন-এর নেতৃত্বে এক অভিনব গবেষণা হয়েছে। তাঁরা এক নতুন ‘সামগ্রী সংক্রান্ত এ আই’ কাঠামো তৈরি করেছেন, তার নাম মাল্টিপল স্পেক্টোগ্রাম ফিউশন নেটওয়ার্ক। ওয়াই ফাইয়ের ভিত্তিতে মানুষের কাজকর্ম চিনতে পারা এর কাজ। সম্প্রতি ‘আই ই ই ই ইন্টারনেট অব থিংস’ পত্রিকায় এ গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক জেয়ন জানিয়েছেন, বর্তমানে চালু ওয়াই ফাই-ভিত্তিক চিনতে-পারার কাজে অনেক সময় সুস্থিরতা থাকে না পরিবেশের ব্যাঘাতে। এই সমস্যা সমাধান করাই ছিল তাঁদের গবেষণার উদ্দেশ্য। এ জন্য তাঁর তিনটি অংশ যুক্ত এক দৃঢ় ডিপ লার্নিং কাঠামো তৈরি করে নিলেন, যা সূক্ষ্ম ও স্থূল দুরকম কাজকর্মই চিনতে পারে।এর ফলে অস্বাভাবিক কাজকর্মকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্ণিত করা সম্ভব হল, সংগৃহীত ডেটা থেকে নিপুণভাবে উচ্চস্তরের বৈশিষ্ট্যগুলি নিষ্কাশন করা গেল, এবং মিশ্র-মডেলের ফিউশনকে জোরালো করে তোলা গেল। এবার এই কাঠামোর কার্যকারিতা যাচাই করে দেখলেন তাঁরা। দেখা গেল ওয়াই ফাইয়ের ডেটার ভিত্তিতে স্থূল এবং সূক্ষ ক্রিয়াকলাপ চিনতে পারার জন্য বর্তমানে চালু সবথেকে উন্নত প্রকৌশলগুলির চেয়ে এর কাজকর্ম অনেক উন্নত মানের। এর ব্যবহারিক সম্ভাবনা প্রচুর। যেমন, ব্যবহারকারীর হাঁটাচলা বিশ্লেষণ করে এই প্রকৌশল তাকে পড়ে-যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারে। কিংবা স্বাস্থ্যর ওপর নজর রাখবার জন্য মুখোমুখি না-বসেই ব্যবস্থা নেওয়ার সিস্টেম তৈরি করতে পারে। ওয়াই ফাই-এর সাহায্যে কাজকর্ম চিনতে-পারা এবং ‘সামগ্রী সংক্রান্ত এ আই’-র সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মিলন ঘটানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এ গবেষণায়। সব মিলিয়ে এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য আর নিরাপত্তা অনেকখানি বাড়াবে বলেই আশা।
সূত্র: IEEE internet of Things Journal, 13 May 2024

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =