সারা বিশ্বের মানুষ প্রচুর সামুদ্রিক খাবার খায়, কিন্তু মহাসাগরের এই সম্পদ অসীম নয়। অতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে অনেক মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ভারী ধাতু এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ, স্থায়িত্বের অভাব, সেইসঙ্গে নৈতিক উদ্বেগ, কিছু মানুষকে উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু যাদের সামুদ্রিক খাবারদাবার পছন্দ তাদের জন্য এই ধরনের বিকল্প এখনও খুঁজে পাওয়া কঠিন। যদিও কিছু সামুদ্রিক খাবারের অনুকরণে তৈরি করা খাবার – যেমন কাঁকড়ার মাংস অনুকরণে পোলক বা অন্যান্য সাদা মাছের কিমা দিয়ে তৈরি করা বিকল্প খাবার – ইতিমধ্যেই বাজারে ছেয়ে গেছে কিন্তু কোনো মাছ বা মাংসের স্বাদের অনুকরণে উদ্ভিদ দিয়ে বিকল্প খাবার তৈরি বেশ একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার৷ শাকসবজি বা ছত্রাক ব্যবহার করে রান্না করা খাবারে মাছ বা মাংসের পুষ্টি উপাদান, টেক্সচার বা হালকা স্বাদ আনা বেশ কঠিন। প্রধান গবেষক ডেজিয়ান হুয়াং-এর মতে সামুদ্রিক খাবারের অনুকরণে উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি করা বিকল্প খাবারের উপাদানে সাধারণত প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত থাকে না। তাই গবেষকরা এমন প্রোটিন-ভিত্তিক খাবার তৈরি করতে চেয়েছিলেন যেগুলো পুষ্টির দিক থেকে আসল সামুদ্রিক খাবারের সমতুল্য বা তার চেয়েও ভালো।
সম্প্রতি, সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে হুয়াং এবং তার গবেষক দল আরও ভালো সামুদ্রিক খাবারের অনুকরণে বিকল্প খাবার তৈরি করতে ডাল জাতীয় প্রোটিনের ব্যবহার করেছে। তারা একটি ফুড-গ্রেড 3D প্রিন্টারের মাধ্যমে একটি প্রোটিন-ভিত্তিক কালি দিয়ে খাবারের প্রতিলিপি বা 3D প্রিন্ট করেছে যাতে আসল মাছের অস্বস্তি এবং স্বাদ রয়েছে। ভোজ্য কালি স্তরে স্তরে জমা করার ফলে এমন একটি খাবার তৈরি হয়েছে যাতে বিভিন্ন টেক্সচার রয়েছে যার মধ্যে কিছু চর্বিযুক্ত ও মসৃণ এবং অন্যগুলো তন্তুযুক্ত এবং চিবানোর মতো। তারা লাল মসুর ডাল ব্যবহার করে সালমন মাছের ফিলেট ও চিংড়ি মাছ প্রিন্ট করেছে। এই কাজে তারা এমন উদ্ভিদ চয়ন করেছে যাতে বেশি পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যেমন মাইক্রোঅ্যালগা এবং সবুজ মুগ। কিছু মাইক্রোঅ্যালগার মধ্যে “মাছের” মতো একটা স্বাদ রয়েছে তাই তারা সেগুলো দিয়ে স্কুইডের অনুকরণে বিকল্প খাবার তৈরি করেছে। হুয়াং-এর মতে বেশ কিছু মানুষ রয়েছে যাদের চিংড়ি বা কাঁকড়া খেলে অ্যালার্জি হয় তাদের জন্য চিংড়ি বা কাঁকড়ার অনুকরণে তৈরি উদ্ভিদজাত খাবার নিরাপদ। অদূর ভবিষ্যতে, গবেষকের দলটি অনেকগুলো প্রোটোটাইপ তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে যাতে সহজে বড়ো আকারে এই অনুকরণীয় বিকল্প খাদ্য উত্পন্ন করা যেতে পারে। হুয়াং আশা রাখেন যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই জাতীয় বিকল্প খাদ্য রেস্তোরাঁ বা বিশেষ আউটলেটগুলোতে পাওয়া যাবে।