
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আরভিন (University of California, Irvine) দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণা নিশ্চিত করেছে যে মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন, মহাসাগরগুলির গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি চক্রগুলিকে বদলে দিচ্ছে। এই চক্রগুলি মহাসাগরের বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কম্পিউটার মডেলগুলি থেকে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের গ্রহ উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে, মহাসাগরগুলি আরও স্তরিত হয়ে যায়, যার ফলে কিছু অঞ্চলে পুষ্টি উপাদানগুলির ঘাটতি হয়। অধ্যাপক অ্যাডাম মার্টিনি এবং স্নাতক ছাত্র স্কাইলার গেরেস গ্লোবাল ওশান শিপ-বেসড হাইড্রোগ্রাফিক ইনভেস্টিগেশনস প্রোগ্রাম (GO-SHIP) থেকে ৫০ বছরের পুষ্টি উপাদানের ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন। প্রোসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত তাদের এই গবেষণাটি, গত অর্ধ শতাব্দীতে সামুদ্রিক পুষ্টি উপাদানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলির বর্ণনা দিয়েছে।
গবেষণাপত্রটির মতে, দক্ষিণ গোলার্ধের মহাসাগরগুলিতে ফসফরাসের মাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ পতন ঘটেছে। ফসফরাস সামুদ্রিক খাদ্যজালগুলির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত প্ল্যাঙ্কটনের জন্য। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, মহাসাগরীয় খাদ্য শৃঙ্খলের ভিত্তিতে থাকে অণুজীব প্ল্যাঙ্কটন। যখন প্ল্যাঙ্কটন কম ফসফরাস পায়, তারা কম পুষ্ট হয়, এবং খাদ্যের জন্য তাদের উপর নির্ভরশীল জুপ্ল্যাঙ্কটন এবং মাছের বৃদ্ধির হারে তার প্রভাব পড়ে ।
অদ্ভুতভাবে, গবেষকরা নাইট্রেটের মাত্রা কমবে বলে আশা করে থাকলেও, তারা দেখতে পেয়েছেন যে নাইট্রেটের ঘনত্ব স্থিতিশীল রয়েছে। নাইট্রেট বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এর স্থিতিশীলতা একটি ইতিবাচক লক্ষণ। তবে, দলটি সতর্ক করে দিয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে নাইট্রেটের মাত্রাও কমে যেতে পারে।
গবেষণাটি এমন সব প্রোগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরেছে যা জি ও-এস এইচ আই পি(GO-SHIP) -এর মতো সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর ডেটা সংগ্রহ করে। এই ধরণের মিশনগুলি না থাকলে, জলবায়ু সংক্রান্ত মডেলগুলি দ্বারা তৈরি পূর্বাভাস নিশ্চিত করা কঠিন হবে। উদাহরণস্বরূপ, মডেলগুলি নাইট্রেটের মাত্রায় পতনের পূর্বাভাস দিয়েছিল,কিন্তু প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণগুলি ভিন্ন ফল দেখিয়েছে। আগামীতে, গবেষণা দলটি অন্বেষণ করতে চায় যে, কীভাবে বিশ্বব্যাপী এই পরিবর্তনশীল পুষ্টিচক্রগুলি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রগুলিকে প্রভাবিত করে। তাদের আশা, এই পুষ্টির পরিমাপগুলি মহাসাগরের স্বাস্থ্যের সূচক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। মূলত, এই গবেষণাটি এই কথা জানায় যে, কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মহাসাগরগুলিকে পুনর্গঠন করছে। এটি জোর দেয় ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর।