
সামুদ্রিক শামুক, তাদের অদ্ভুত আকার এবং আকর্ষণীয় রঙের জন্য প্রসিদ্ধ। এদের অনেকেই, দিনের আলোতে জ্বলজ্বল করে। বিপদের আঁচ পেলে,এরা লুকোতে নয় বরং পরিবর্তে উজ্জ্বল রং বা ডোরাকাটা দাগ প্রদর্শন করে, শিকারির হাত থেকে রেহাই পায়। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় ড: সেড্রিক ভ্যান ডেন বার্গ এবং তার দল ৪৫টি ‘নুডি ব্রাঞ্চ’ গোত্রের শামুক পরীক্ষা করে দেখেছেন। কিভাবে শিকারি প্রতিরোধে তারা, তাদের এই রঙের ধরনকে কাজে লাগায়! গবেষকরা, ট্রাইকোমেটিক দৃষ্টিশক্তি সহ কিছু শামুক কিভাবে মাছ ধরে তা পর্যবেক্ষণ করেছেন। অপরদিকে উজ্জ্বল পরিবেশে সক্রিয় থাকা, তাদের রঙিন বিষাক্ত হুল কিভাবে প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে সাহায্য করে, তা বোঝার চেষ্টা করেন। “সামুদ্রিক শামুকগুলি উজ্জ্বল বিপরীত রঙের ধরন ব্যবহার করে সম্ভাব্য শিকারিদের বার্তা পাঠায় ‘আমাকে খেয়ো না আমি বিষাক্ত,” ডঃ বার্গ উল্লেখ করেন। এরা প্রায়শই অপসসোম্যাটিক সংকেতের উপর নির্ভর করে, যা উজ্জ্বল বা সাহসী চিহ্ন নির্দেশ করে, যা শিকারীদের ভয় দেখায়। এদের মধ্যে কিছুজনের রাসায়নিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন, যন্ত্রণাদায়ক বিষাক্ত পদার্থ বা হুল ফোটানোর কোষ। এই শামুকগুলি ঘন ডোরাকাটা বা উজ্জ্বল দাগের হয়ে থাকে। দৃষ্টিশক্তির উপর নির্ভরশীল মাছেদের কাছে এই রঙগুলি তীব্র আকর্ষণীয়। তাই আলোকিত পরিবেশে, এটি একটি স্পষ্ট যোগাযোগ কৌশল হয়ে ওঠে। তুলনামূলকভাবে, নিশাচর শামুকগুলি সাধারণত প্রকৃতির মধ্যে লুকিয়ে থাকে। সূর্যাস্তের পরে,শিকারের সময় তারা অন্ধকারে সহজে দৃষ্টি এড়িয়ে যায়! এমনকি কোনরকম হুমকির বিজ্ঞাপনও দেয় না। মাছের চোখের সাথে এই নিদর্শনগুলি কিভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা অনুকরণ করার জন্য গবেষকরা বিশেষ ইমেজিং ব্যবহার করা হয়। রঙিন পটভূমিতে, সাদা বা গাঢ় রঙের ডুরে নকশার দ্রুত ঝলকানি, মাছগুলিকে তার সহজ খাবার – এই শামুকটি সম্পর্কে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করে। ড: বার্ক জানান,” আমরা যত প্রজাতির দিকে নজর দিয়েছি তার প্রায় ৯০ শতাংশের দৈনন্দিন কার্যকলাপ সফলভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা গেছে। এর মধ্যে শামুকগুলি কেমন দেখায়, তারা প্রতিদিন কখন ঘুরে বেড়ায় এবং কখন এই শক্তিশালী যোগাযোগের ইঙ্গিত দেয় সব তথ্যই রয়েছে”। রঙিন বার্তা পাঠানোর জন্য, আলো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আবছা আবহাওয়ায়, গাঢ় রূপরেখা বা উচ্চ বৈসাদৃশ্যের দাগগুলি ম্লান হয়ে যায়। কিন্তু সরাসরি রোদের নীচে আসলে, সেই রঙগুলিই বিশেষ দৃষ্টি বা মনোযোগ আকর্ষণ করে। এমন কিছু শামুক রয়েছে, যারা শিকারীর মুখের দিকে বিষাক্ত পদার্থ ছুঁড়ে দেয়। এই অভিজ্ঞতাই শিকারিদের পরবর্তী উজ্জ্বল দাগসহ শামুকগুলি থেকে নিজেদের বিরত রাখে। বিজ্ঞানীরা, শরীরের নকশা বা রূপরেখাগুলিকে, শামুকের ‘সতর্কীকরণ প্রদর্শনের অপরিহার্য অংশ’ বলে অভিহিত করেছেন। এটি যেন প্রাণবন্ত পোষাক পড়ার মতন! বিপদের সংকেত দেয়- প্রথমে প্রশ্ন জাগায়,পরে কামড় বসায়। এই প্রাণীরা তাদের প্রজাতিগত বৈশিষ্ট্য এবং খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে, শরীরের মধ্যে বিষাক্ত যৌগ উৎপাদন এবং সঞ্চয় করে। কিছু শামুক তাদের খাবারের থেকে ক্ষতিকারক উপাদান শোষণ করে, পিঠের উপর দংশনকারী কোষে, তা জমা রাখে। যদিও সবকটি সামুদ্রিক শামুকই যে এই রাসায়নিক প্রতিরোধক ব্যবহার করে, তা নয়। কিছু কিছু শামুকের হালকা এমনকি কোন বিষাক্ত পদার্থই থাকে না। এরা রাতের বেলায় লুকিয়ে থাকে বা পরিবেশে ছদ্মবেশ গ্রহণ করে। অন্যান্য শামুকেরা একাধিক কৌশল অবলম্বন করে। অন্ধকারে, বায়োলুমিনেসেন্ট ঝলকানি ব্যবহার করে। তবে পরে হয়রানির শিকারও হয়। বিভিন্ন কোন থেকে উজ্জ্বল বস্তু দেখতে পাওয়া, মাছের ভরা কোন সামুদ্রিক পরিবেশে রঙিন সর্তকতা একটি সাধারণ বিষয়। সামুদ্রিক শামুকগুলি এই বৈশিষ্ট্যকেই নিজেদের হাতিয়ার বানিয়েছে। কিছু শামুকের গায়ে উজ্জ্বল গোলাকার বা গাঢ় ডোরাকাটা দাগ থাকে যা আক্রমণকারীদের পিছু হটতে বাধ্য করে। জীব বিজ্ঞানীরা, সমুদ্রের পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে এই ধরনগুলি কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা দেখতে আগ্রহী। জল যদি আরো ঘোলাটে হয়ে যায় কিংবা কোন স্থানে শিকারি মাছের সংখ্যা হ্রাস পায়, তাহলে কোন সংকেতগুলি কার্যকর থাকবে এবং কোনগুলি পরিবর্তিত হবে তা দেখার বিষয়। ভবিষ্যতের গবেষণা অগভীর জলে উজ্জ্বলতম শামুকের বেঁচে থাকার উপরে কি প্রভাব আনবে সে সম্পর্কে জানতে চায়। অগভীর বা ঘোলাটে জলে আলোর পরিবর্তনে ছদ্মবেশের কোন বৈশিষ্ট্য গুলি পরিবর্তন হবে তা লক্ষ্য করার মতন। একটি শামুকের নির্ভরযোগ্য এই চটকদার আক্রমণ অযথা ব্যবহার না হলে, সময়ের সাথে সাথে তাদের এই রাসায়নিক প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী হয়ে যেতে পারে। শামুকগুলি এতটা সাহসী হতে পারে না, যে ক্ষুধার্ত শিকারিদের পরীক্ষা করতে চায়। তবুও দিনের আলোতে সংকেত স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠার জন্য তাদের যথেষ্ট সাহসী হতে হয়! সামুদ্রিক শামুকগুলির উপর করা এই গবেষণা থেকে জানা যায়, কিভাবে এই চতুর চাক্ষুষ সংকেতগুলি তাদের দৈনন্দিন জীবনকে নানা মোড় দেয়!