সিকিমের বন্যা – কারণ ও শিক্ষা

সিকিমের বন্যা – কারণ ও শিক্ষা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

৩রা অক্টোবর, ২০২৩। সিকিমে একটি বহুমুখী বিপর্যয় শুরু হয়। হিমবাহ হ্রদের বিস্ফোরণ (জিএলওএফ) – আর তা থেকেই বন্যা। দুর্যোগে ক্ষতির তালিকা বেশ লম্বা ছিল। নিহত, আহত, নিখোঁজ…সাথে কৃষি জমির প্রভূত ক্ষতি এবং জলবিদ্যুতের বাঁধ ধ্বসে পড়া । সিকিমের এই বন্যাকে ‘২০২৩ সালে এশিয়ার সবচেয়ে খারাপ জলবায়ু-সম্পর্কিত দুর্যোগ’গুলির মধ্যে একটি বলে ঘোষণা করা হয়। সিকিম বন্যার সময় কী ঘটেছিল তা বিশেষণ করলে, অনুরূপ দুর্যোগের জন্য অন্যদের প্রস্তুত করা যাবে।

ব্রিটেনের হাল, লিডস ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, এবং ভারত ও বাংলাদেশ সহ মোট দশটি দেশের বিজ্ঞানী, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞরা, এই বন্যা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন, গবেষণা চালিয়েছেন। “এই বিপর্যয়কর ঘটনাগুলি ক্রমশই বেড়ে চলেছে। হিমালয় এবং বিশ্বের অনুরূপ অঞ্চলগুলিতে আমাদের পরিবেশ এবং জনগোষ্ঠী, উভয়কেই রক্ষা করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে আমাদের তাড়িত করছে”, বলে জানান গবেষণার প্রধান লেখক ড. আশিম সাত্তার। সিকিম বন্যার উৎস সাউথ ল্হোনাক হ্রদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এটি এ অঞ্চলের বৃহত্তম এবং দ্রুত সম্প্রসারণশীল হিমবাহ হ্রদগুলির মধ্যে একটি। সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণা বলছে, একটি ভূমিধস সাউথ ল্হোনাক হ্রদে এসে পড়ে এবং তা থেকে বিস্ফোরণ শুরু হয়। বিস্ফোরণটি প্রায় ২০ মিটার উচ্চতার সুনামির মতো ঢেউ সৃষ্টি করে। যা সামনের মোড়েনকে (হিমবাহের স্বাভাবিক বাঁধ) ভেঙে ফেলে। ফলত ৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার জল মোড়েন থেকে ছাড়া পায়। বিশাল এই জলরাশি উপত্যকায় নেমে এসে শত শত কিলোমিটার জুড়ে কাদামাটি-বন্যা ও ব্যাপক ধ্বংস চালায়। তাঁরা দেখিয়েছেন জলবায়ু উষ্ণায়ন কিভাবে এই ঘটনাটিকে তীব্রতর করেছে। ভারী বৃষ্টিপাত ভূমিধসের আদর্শ কারণ, যা তিস্তা উপত্যকায় পলি পরিবহন ও ভাটি ধ্বংসকে বাড়িয়ে তুলেছিল। এটি শুধু ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গকেই নয়, উপরন্তু বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করেছে।
গবেষণা দলের একাংশ সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলির প্রথম সার্বিক মূল্যায়ন করেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করেছেন। জানানো হয়, ১৫ মিলিয়ন মানুষ একটি হিমবাহ হ্রদের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে বাস করে। এশিয়ার উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে ৯.৩ মিলিয়ন মানুষ এখন সম্ভাব্য ঝুঁকিতে রয়েছে। “দ্রুত জলবায়ু সতর্কতা – বিশেষত বিশ্বব্যাপী পার্বত্য অঞ্চলগুলিকে আরও সতর্ক করতে, জিএলওএফ এর বিপদ মূল্যায়ন বাড়ানো উচিত। এর থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা, অনুরূপ দুর্ঘটনার পূর্বাভাস ও প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা উন্নত করার ক্ষেত্রে, বেশ গুরুত্বপূর্ণ” ড. সাত্তার একটি বিবৃতিতে বলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × one =