সীসের পরশপাথর

সীসের পরশপাথর

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ মে, ২০২৫

একটি সীসে পরমাণুর কেন্দ্রকে থাকে ৮২টি প্রোটন। একটি স্বর্ণ পরমাণুতে থাকে ৭৯টি। সীসের কেন্দ্রক থেকে তিনটে প্রোটন খসিয়ে দিতে পারলেই সীসে হয়ে যাবে সোনা। যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর নানা দেশের আলকেমিস্টরা নানারকম অপ-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সে-চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পারেননি। কারণ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ওই রূপান্তরণ ঘটানো অসম্ভব। সম্প্রতি সুইটজারল্যান্ডের জিনিভাতে সি ই আর এন ল্যাবে সেই কাণ্ডই ঘটিয়েছেন কণা-বিজ্ঞানীরা। আলকেমিস্টদের স্বপ্ন কি ঘুরপথে বাস্তবায়িত হল?
জিনিভার বিজ্ঞানীরা আলোর কাছাকাছি গতিতে চলমান অনেকগুলি সীসে আয়নগুচ্ছকে পরস্পরের বিরুদ্ধে চালিত করেন। আয়নগুচ্ছগুলো অনেক সময় একে অপরের গা ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়, মুখোমুখি ধাক্কা লাগায় না। এই সময় একটি আয়নকে ঘিরে প্রবল এক তড়িৎচুম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। তা থেকে বেরিয়ে আসা শক্তির একটি স্পন্দর (পাল্‌স) ঠেলায় আগুয়ান একটি সীসা কেন্দ্রক থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে তিনটি প্রোটন। ফলে সীসা কেন্দ্রকটি স্বর্ণে রূপান্তরিত হয়। ৭ মে তারিখে ফিজিক্যাল রিভিয়ু জার্নাল্‌স-এ প্রকাশিত একটি লেখায় জানানো হয়েছে যে, ২০১৫ থেকে ২০১৮-র মধ্যে সি ই আর এন-এর ল্যাবে যত সংঘর্ষ বাধানো হয়েছে তা থেকে ৮৬০০ কোটি স্বর্ণ কেন্দ্রক তৈরি হয়েছে। তার ওজন ১ গ্রামের ২৯ ট্রিলিয়ন (ট্রিলিয়ন=লক্ষ কোটি) ভাগ। সেইসব দ্রুতগামী, অস্থিত পরমাণুগুলির বেশির ভাগেরই আয়ু ১ মাইক্রোসেকেন্ড। তার পরই তারা হয় পরীক্ষাযন্ত্রে নাহয় অন্যান্য কণাদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে, নতুবা ভেঙে গিয়ে অন্যন্য কণায় রূপান্তরিত হয়।

যখনই সীসা আয়নগুচ্ছ লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার নামক যন্ত্রে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখনই সোনা তৈরি হয়। এটা আগেই জানা ছিল। নিউ ইয়র্কের স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী জিয়াংইয়ং জিয়া জানিয়েছেন, ২০০২ থেকে ২০০৪-এর মধ্যে সি ই আর এন-এর অন্য একটি ত্বরণযন্ত্রে সীসে থেকে সোনায় রূপান্তরণের ঘটনা পর্যবেক্ষিত হয়েছিল। তবে তার শক্তিমাত্রা ছিল খুব ক্ষীণ। কিন্তু এইবার এই প্রথম একটি পরীক্ষাযন্ত্রে প্রস্তুত স্বর্ণর উৎপাদনকে প্রণালীবদ্ধভাবে শনাক্ত করে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হল। এ কথা জানিয়েছেন উলিয়ানা দিমিত্রিয়েভা। এখনকার পরীক্ষাগুলিতে অনেক উচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। এ থেকে সোনা তৈরির সম্ভাবনা যেমন বেশি, তেমনি প্রক্রিয়াটিকে খুঁটিয়ে দেখবার সুযোগও অনেক বেশি।
না, সোনা তৈরিকে গৌণ চর্চার বিষয় হিসেবে গণ্য করার কোনো বাসনা নেই সি ই আর এন-এর বিজ্ঞানীদের। তাঁদের আগ্রহের মূল জায়গাটা হল, কী করে প্রোটন বদলে দেয় কেন্দ্রককে সেটা ভালো করে বোঝা। জিয়া বলেছেন, আয়ন গুচ্ছর গুণমান আর স্থায়িত্ব নিয়ন্ত্রণের কাজে এই ধরণের প্রক্রিয়াকে অনুধাবন করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: doi:https://doi.org/10.1038/d41586-025-01484-3

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − three =