সুপারবাগের শীর্ষ ঝুঁকিতে ভারত

সুপারবাগের শীর্ষ ঝুঁকিতে ভারত

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ নভেম্বর, ২০২৫

আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে ভারতের জন্য সতর্ক সংকেত দেখা দিয়েছে। দ্য ল্যানসেটের ক্লিনিক্যাল মেডিসিন-এ প্রকাশিত বহুদেশীয় এক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) বা সুপারবাগের বিরুদ্ধে ভারতের পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে খারাপের দিকে যাচ্ছে। চিকিৎসার আগে, এন্ডোস্কোপিক পরীক্ষায় রোগীদের শরীরে প্রতিরোধী জীবাণু পাওয়া গেছে। ভারতীয় রোগীদের মধ্যে এসব প্রতিরোধী জীবাণুর উপস্থিতি বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যাপ্তি দেখে ভারতকে এখন “বিশ্বের সুপারবাগের কেন্দ্রবিন্দু” বলা যায়। সমস্যাটি কেবল চিকিৎসার জটিলতাই বাড়ায় না, বৃহত্তর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও গভীরভাবে দুর্বল করে তোলে।

ভারত, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডসের মোট ১,২০০-এর বেশি রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারতের ৮৩.১% রোগী অন্তত একটি বহু- ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু বহন করছে। তুলনায় ইতালি ৩১.৫%, যুক্তরাষ্ট্র ২০.১% এবং নেদারল্যান্ডস ১০.৮%। অর্থাৎ, দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইতালির তুলনায় ভারতের ঝুঁকি তিন গুণেরও বেশি। গবেষকরা বলছেন, এ কোনো সাময়িক পরিবর্তন নয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে ভারতের ৭০.২% রোগী এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া বহন করে যা সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিককে প্রায় অকেজো করে দেয়। পাশাপাশি ২৩.৫% রোগীর শরীরে কার্বাপেনেম-প্রতিরোধী জীবাণু পাওয়া গেছে। যা, শেষ ভরসার অ্যান্টিবায়োটিকটিকেও অকেজো করতে পারে। অনেক রোগীর শরীরে একাধিক শ্রেণির ভয়াবহ সুপারবাগ একসঙ্গে রয়েছে। তুলনায় নেদারল্যান্ডসে প্রায় শূন্য এবং যুক্তরাষ্ট্রেও কার্বাপেনেম-প্রতিরোধের ঘটনা খুবই বিরল। ফলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারতের পরিস্থিতি স্থানীয় এবং কাঠামোগত কারণেই সংকটময়। অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বিনা প্রেসক্রিপশনে ওষুধ বিক্রি এবং হাসপাতালের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা একসাথে কাজ করছে।

 

যাদের দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগ আছে, হৃৎপিণ্ডের বিকলতা আছে, যারা সম্প্রতি পেনিসিলিন বা অন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছেন, বারবার হাসপাতালে ভর্তি হন, যাদের আগে সার্জারি বা জটিল চিকিৎসা হয়েছে – সেইসব রোগীদের মধ্যে এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে সব দেশের জন্য একই নীতি কার্যকর হবে না। স্থানীয় বাস্তবতার ভিত্তিতে প্রতিরোধী জীবাণুর বিরুদ্ধে কৌশলকে অভিযোজিত করতে হবে। ভারতের প্রসঙ্গে কিছু বিশেষ সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে কড়াকড়ি করা। চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি কঠোর নিয়ন্ত্রণ আনা। উচ্চ ঝুঁকির চিকিৎসার আগে নিয়মমাফিক স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করা। সংক্রমণ রোধে সিঙ্গল-ইউজ ডিভাইস প্রয়োগ বিবেচনা করা এবং হাসপাতালের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করা। এখনই পদক্ষেপ না নিলে, সুপারবাগ সাধারণ অস্ত্রোপচার থেকে ক্যান্সার চিকিৎসা সবকিছুকেই, সর্বোপরি জনস্বাস্থ্যকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে।

 

সূত্র : India’s alarming superbug surge poses global threat, warns Lancet study; Buisness Standard; Nov 18, 2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + four =