সূর্যের বুকে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নানান গতিবিধি

সূর্যের বুকে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নানান গতিবিধি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ আগষ্ট, ২০২৪
সূর্যের বুকে

আমাদের পৃথিবী থেকে আকাশের বুকে সূর্যকে দেখে নিতান্ত শান্ত স্থির মনে হয়। কিন্তু আসলে সূর্যে প্রতিনিয়ত ঘটে যায় বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরণ, সৌর ক্রিয়াকলাপ, যা গত বছর বা তারও আগে পর্যন্ত জ্যোতির্পদার্থবিদরা আশা করেননি।
বিজ্ঞানীদের মতে সোলার সাইকেল বা সৌর চক্র সাধারণত প্রতি ১১ বছর অন্তর ঘটে। এই সময়ের মধ্যে, সূর্যে ঘটে যাওয়া সৌর ক্রিয়াকলাপ সবচেয়ে কম থেকে সবচেয়ে বেশির দিকে যায়। সৌর চক্রের মধ্যবর্তী সময়ে সূর্য সর্বাধিক সক্রিয় থাকে আর এই সময়ে সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র উল্টে যায়। সর্বশেষ সৌর চক্রটি ঘটে ২০০৮ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত। আমরা এখন বর্তমান সৌর চক্রের মাঝামাঝি রয়েছি এবং সর্বাধিক চৌম্বকীয় ক্রিয়াকলাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। গত বেশ কয়েক বছর ধরে সৌর চৌম্বকীয় ক্রিয়াকলাপ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এটি সূর্যের গভীরে শক্তিকে রোধ করে রেখেছে পৃষ্ঠে পৌঁছাতে দেয়নি। ফলে সৌর পৃষ্ঠে শীতল পকেট সৃষ্টি হয়েছে যা অন্ধকার দাগ হিসাবে দেখা যায়। এই পকেটগুলোর নাম সানস্পট। বিজ্ঞানীরা সূর্যের এই দাগ গণনা করে সৌর কার্যকলাপের মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পান। গত বছর বা তার বেশি সময় ধরে এই সানস্পটের সংখ্যা শীর্ষে পৌঁছে গেছে। এই মাসের শুরুর দিকে, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ২৯৯টি সানস্পট পাওয়া গেছে যার সবগুলোই ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেখা দিয়েছে। এই সংখ্যা বিগত ২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সূর্যের এই দাগ ট্র্যাক করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা শক্তিশালী সোলার ফ্লেয়ার এবং করোনাল মাস ইজেকশনের কথা বলে। সূর্য থেকে নির্গত সোলার ফ্লেয়ারে থাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক ও শক্তিশালী কণা। যাদের নাম সৌরকণা বা সোলার পার্টিকল। আমরা যাকে সৌরঝড় বা সোলার স্টর্ম বলে জানি, তার অন্যতম কারণ এই সোলার ফ্লেয়ার। সূর্যের এই হানাদারেরা পৃথিবীর উপর হামলা চালালে কেঁপে উঠবে পৃথিবীর চার পাশে থাকা চৌম্বক ক্ষেত্র। দুই মেরুতে আরও ঘনঘন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখা যাবে মেরুজ্যোতি। কিছু ক্ষণের জন্য হলেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে যাবতীয় রেডিয়ো যোগাযোগ ব্যবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিশ্বের একাংশের বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থাও। ব্যাহত হতে পারে জিপিএস-মোবাইল-বিদ্যুৎ পরিষেবাও। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন সূর্যের এই ক্রিয়াকলাপ সর্বোচ্চ স্তরে না পৌঁছানো পর্যন্ত এগুলো বাড়তে থাকবে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন সোলার ম্যাক্সিমাস। পূর্বাভাষ অনুসারে ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে সৌর ক্রিয়াকলাপ সর্বাধিক ঘটবে, তারপর তা আবার হ্রাস পেতে শুরু করবে।