স্টোন বেবি – অস্বাভাবিক এক গর্ভাবস্থা

স্টোন বেবি – অস্বাভাবিক এক গর্ভাবস্থা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ জানুয়ারী, ২০২৫

নিষিক্ত মানব ডিম্বাণু মায়ের পেটের গহ্বরের মধ্যে জরায়ুর বাইরে ভ্রূণে বিকশিত হতে পারে। এই ধরনের গর্ভাবস্থা অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি হিসেবে পরিচিত। এটা খুবই বিপজ্জনক। খুব কম ক্ষেত্রে অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সিতে ভ্রূণ মারা গেলে শরীর নিজেকে রক্ষা করার জন্য ভ্রূণকে ‘পাথরে’ পরিণত করে। বাস্তবে এটা ধাতু। হাড়ের একটা প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম, মায়ের শরীর থেকে ভ্রূণের চারপাশে এই ধাতব খনিজ ক্যালসিয়াম প্রবেশ করে। এই পদ্ধতি ক্যালসিফিকেশন নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে শরীর নিরাপদে মায়ের নিজের শরীর থেকে ভ্রূণকে আলাদা করে রেখে শরীরকে সেপসিস থেকে রক্ষা করে। এই ধরনের ক্যালসিফাইড ভ্রূণের ডাক্তারি নাম লিথোপেডিয়ন, প্রাচীন গ্রীক ভাষায় যার অর্থ ‘স্টোন বেবি’। এই ঘটনা এতই বিরল যে এটা কয়েকশ বার নথিভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল প্রায়শই, স্টোন বেবি মায়ের শরীরে বছরের পর বছর এমনকি কয়েক দশক ধরে অনাবিষ্কৃত থাকতে পারে। মেনোপজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বা কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত থাকে। অনেক সময় মা নিজে টের পান না। ১৯৯৬ সালে, এক কেস রিপোর্টে ৮৫ বছর বয়সী একজন রোগিনীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে ৪১ বছর বয়সে “অসম্পূর্ণ গর্ভপাত”-এর আগে সফলভাবে তিনি চারটি শিশুর জন্ম দিয়েছিলেন। সেই অসম্পূর্ণ ভ্রূণ নিয়ে কয়েক দশক ধরে কিছু না জেনে তিনি বেঁচে ছিলেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটা কেস রিপোর্ট একজন ৭৭ বছর বয়সী রোগীর লিথোপেডিয়ান বর্ণনা করা হয়েছে, তাঁর আগে বিশ্বাস ছিল, তিনি কখনোই গর্ভবতী হন নি। ২০১৬ সালে এক কেস রিপোর্টে ময়নাতদন্তের সময় একজন ৮৭ বছর বয়সী মৃত মহিলার লিথোপেডিয়নের কেস নথিভুক্ত করা হয়েছে।
২০২৩-এর সমীক্ষার অনুমান প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ২০ কোটি ৮০ লাখ গর্ভধারণ ঘটে। সেই পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে, গর্ভধারণ ও লিথোপেডিয়নের হার হিসেব করলে, বছরে ৩৭৪টা গর্ভধারণের ফলে স্টোনি বেবি হওয়ার সম্ভাবনা। অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি হল এক ধরনের অ্যাক্টোপিক গর্ভাবস্থা, যেখানে নিষিক্ত ভ্রূণ নিজেকে জরায়ুর বাইরে ইমপ্লান্ট করে। অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সিতে একটোপিক গর্ভাবস্থার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হল ফ্যালোপিয়ান টিউবে ভ্রূণ সঞ্চালিত হওয়া। তবে ডিম্বাশয় বা জরায়ুমুখেও এই ধরনের গর্ভাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। সমস্ত গর্ভধারণের প্রায় ২ শতাংশ একটোপিক; তাদের মধ্যে, আনুমানিক ০.৬ থেকে ৪ শতাংশ অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি। এই বিপজ্জনক গর্ভাবস্থায়, ভ্রূণ সাধারণত বাঁচে না, তবে বিরল ক্ষেত্রে, সময়ের আগে অপুষ্ট জীবিত শিশুর জন্ম হতে পারে। স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি পরিষেবার ক্রমবর্ধমান উন্নত মানের জন্য ধন্যবাদ, এই ধরনের ঘটনা বিরল হয়ে উঠছে। অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি তাড়াতাড়ি ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি, ভ্রূণ ক্যালসিফিকেশনের পর্যায়ে পৌঁছোনর আগেই চিকিত্সা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + 1 =