
এমআইটি-র বায়োলজির প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমানে ইউএসসি-র কেক স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক ড. আলবার্ট ই. আলমাডা এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন যা জীববিজ্ঞানের ক্যানভাসে বহুদিন ধরেই থমকে আছে- কেন মানুষ নতুন অঙ্গ গজাতে পারে না, অথচ টিকটিকি বা সালাম্যান্ডার পারে? আলমাডার এই গবেষণার অন্তরালে রয়েছে এক ব্যক্তিগত বেদনার কাহিনী। তাঁর ভাই ডুচেন পেশিক্ষয় ( মাসকিউলার ডিসট্রোফি) রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এটি একটি জিনঘটিত রোগ, যাতে পেশির কোষগুলি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীরের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। যখন তার ভাইয়ের পেশি ক্ষয়ে যাচ্ছিল, তখন আলমাডা নিজে কিন্তু বেশ তরতাজা, শক্তিশালী। এই বৈপরীত্যই তাঁকে বিজ্ঞানের অনুসন্ধানের দিকে ঠেলে দেয়। তিনি বলেন, “বিজ্ঞান কখনও কখনও ব্যক্তিগত হয়ে ওঠে!” এমআইটি-তে তাঁর পিএইচ ডি গবেষণা ছিল জিনের বাহ্য অভিব্যক্তি নিয়ে। ডিএনএ থেকে এমআরএনএ-এর দুই দিকে ট্রান্সক্রিপশন বা জিন লিপ্যন্তরনের বিস্ময়কর দ্বিমুখিতা, এবং তার ফলস্বরূপ ছোট ছোট আর এন এ-র উৎপত্তি। এই গবেষণা শুধু মৌলিক বিজ্ঞান নয়, বরং চিকিৎসাবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। এ থেকেই উঠে আসতে শুরু করে, ক্ষতিকর আর এন এ কেটে বা ছোট করে থেরাপি তৈরির সম্ভাবনা। তার মূল প্রশ্ন – কোষকলাতে প্রবল আঘাতের পর স্টেম সেলগুলির বা মূল কোষগুলির সুপ্ত অবস্থা থেকে পুনর্গঠন বা পুনর্জাগরণ কী করে ঘটানো যায়। কেন বার্ধক্যে বা ক্ষয়িষ্ণু রোগে এই ক্ষমতা হারিয়ে যায়? হার্ভার্ডে পোস্টডক করার সময় তিনি বুঝতে পারেন, এই রহস্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে বিশেষ একদল জিন অনুলিপিকারক উপাদানের হাতে। চোট পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেগুলি স্টেম সেল-কে পুনর্জন্মের নির্দেশ দেয়। তাঁর গবেষণাগার এখন সেই জিনগত কৌশলের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখতে চায়। বিশেষ করে টিকটিকি বা সালাম্যান্ডারের মতো অমিত নিরাময় ক্ষমতাসম্পন্ন প্রজাতির স্টেম সেলের সাথে মানুষের তুলনা করে বোঝা যায়, আমাদের জিনোমের গভীরেই লুকিয়ে রয়েছে পুনর্জন্মের নির্মাণ নকশা। যেটা সক্রিয় করতে পারলে হয়তো মানব পেশি নতুন করে গজাবে। আলমাডার গবেষণার বৈজ্ঞানিক সৌন্দর্য এখানেই যে তিনি প্রথা ভাঙছেন – সাধারণ পরীক্ষার জীব ইঁদুরে আটকে না থেকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন টিকটিকির লেজের দিকে। তাঁর গবেষণা স্পষ্ট বলছে, শুধু লেজ নয়, টিকটিকির শরীরের অন্য অঙ্গেও স্টেম সেলের এই পুনর্গঠন-শক্তি বিস্ময়কর। “এই শক্তি হয়তো একদিন আমার ভাইয়ের মতো লক্ষ লক্ষ রোগীর বাঁচার রাস্তা দেখাবে”। তাঁর পরীক্ষাগারটি আজ শুধু একটি গবেষণাগার নয়, একটি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূতিকাগার। সেখানে বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তি পথপ্রদর্শনা সব মিলিয়ে বিজ্ঞান গড়ে উঠছে হৃদয়ের স্পন্দনে। আলমাডার নিজের কথায়, “এমআইটি আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে ভাবতে হয়। আর সেই চিন্তাকে আমি এখন মানুষকে বাঁচানোর অস্ত্রে পরিণত করছি।”এই গবেষণা শুধুই বিজ্ঞান নয়, মানবতার মেরুদণ্ডে পুনর্জন্মের ছাপ।