স্মার্ট হয়ে ওঠার দাম!

স্মার্ট হয়ে ওঠার দাম!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

‘পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে/স্যাটেলাইট আর কেবলের হাতে/ড্রয়িংরুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দী’।

আজ দাঁড়িয়ে এ গান লিখলে ‘মুঠোফোনে বন্দী’ শব্দ দুটো নিশ্চিতভাবেই থাকত। স্মার্টফোন এখন দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ। ফোন থেকে মেল, জামা কেনা থেকে গাড়ী ভাড়া সবটাই হয়ে যায় ফোন থেকে। কিন্তু মনে রাখা দরকার সব ভালর, সব আলোর এক বৃহত্তর ছায়া থাকে। দেখা যাক, স্মার্টফোনের রঙীন স্ক্রিনের অন্যদিক।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে একজন কলেজ স্টুডেন্ট দিনে গড়ে ১০ ঘন্টা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে। আরেকটি সার্ভে অনুযায়ী প্রতি ৫ জন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪ জনই ৬০ মিনিটের বেশি একবারও ফোন চেক না করে থাকতে পারে না। একে বলা হয় নোমোফোবিয়া।

প্রতিদিন তারা বিভিন্ন সোশ্যাল সাইট সহ যতগুলো মেসেজ আদান প্রদান করে তত কথা তারা সারাদিনে কারো সাথে বলেনা। এভাবেই বেড়ে যায় চারপাশের মানুষের সাথে দূরত্ব। ঢুকে পড়ে একাকীত্ব, বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মানুষ চেনা পৃথিবী থেকে।

স্মার্টফোন আর কী কী দিচ্ছে আমাদের? স্নায়ু সমস্যা, উদ্বিগ্নতা এবং হতাশা, মানসিক চাপ, ঘুমের ব্যাঘাত এগুলো তো আছেই। এছাড়াও আছে ব্যাকপেইন সমস্যা। ব্রিটিশ চিরোপ্র্যাক্টিক অ্যাসোসিয়েশন-এর মতে গত কয়েক বছরে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ব্যাকপেইন সহ মেরুদন্ডের কিছু সমস্যা অনেকটাই বেড়ে গেছে।

গবেষণা অনুযায়ী টেক্সট করতে গেলে আমাদের মেরুদন্ডকে আমরা যে কোণে বাঁকিয়ে থাকি এবং এতে মেরুদন্ডে যে পরিমাণ চাপ পড়ে তা প্রায় ৫০ পাউন্ড এর সমান।

স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে দৃষ্টি-শক্তির সমস্যা যে খুব স্বাভাবিক এ কথা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না বোধহয়। টানা অনেকক্ষণ ধরে অতিরিক্ত পরিমাণ স্মার্টফোন ব্যবহার রেটিনার মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ম্যাকুলার ডিজেনারেশান বলা হয়। ম্যাকুলার ডিজেনারেশান-এ আক্রান্ত ব্যক্তি তার চোখের দৃষ্টি অনেকটাই হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং এটি আস্তে-আস্তে অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

অতএব! সন্তর্পণে মুঠোফোনে লুকিয়ে পড়ে একদিন আমরা অনেকেই দেখব যে জ্বলজ্বলে স্ক্রীনের পাশেই আঁধার অতলান্ত।