
গুয়াংঝুর চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েনসেস-এর গবেষকদের এক সাম্প্রতিক গবেষণা সাড়া ফেলে দিয়েছে। তা একদিকে বিস্ময়কর, অন্যদিকে নৈতিক বিতর্কে ঠাসা। তারা এমন শূকর ভ্রূণ তৈরি করেছেন যার ভিতরে মানব কোষ দিয়ে গঠিত একটি হৃৎপিন্ড স্পন্দিত হচ্ছে। হ্যাঁ, মানুষের কোষে গঠিত হৃৎপিন্ড শূকরের শরীরে স্পন্দিত হচ্ছে। গবেষণাটি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক স্টেম সেল গবেষণা সংঘের বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। বিজ্ঞানীরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ হৃৎপিন্ড গঠনের জিন শূকর ভ্রূণ থেকে সরিয়ে দিয়ে তাতে মানুষের স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করেন। এই স্টেম সেলগুলি , কোষ মৃত্যু ঠেকানো এবং তাকে পুনর্গঠনে সক্ষম জিনে সজ্জিত ছিল। এরপর ভ্রূণগুলিকে সম সংখ্যক শূকরগর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। ২১ দিন পর, মানব কোষে গঠিত হৃৎপিন্ড। সেই পর্যায়ে সেটি একটি মানব ভ্রূণের সমানই স্পন্দিত হচ্ছিল। তবে, তারপরেই সেই ভ্রূণগুলি মারা যায়। গবেষক লাই লিয়াংশুয়ে জানান, “সম্ভবত মানব কোষ শূকরের শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করেছিল”। তবে এই গবেষণার বড় লক্ষ্য হল এমন মানব-প্রাণী সংকর জীব তৈরি করা। মানব-প্রাণী সংকর জীবের শরীরে মানুষ এবং অন্য কোনো প্রাণীর কোষ বা জিন একসাথে বিদ্যমান থাকে। পরে প্রয়োজন হলে, মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য সেই অঙ্গ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন গড়ে ১৩ জন মানুষ অঙ্গের অভাবে মারা যান, আর প্রতি আট মিনিটে নতুন কেউ অপেক্ষার তালিকায় নিজের নাম লেখান। এদিকে, আরও এক চমকপ্রদ গবেষণায়, টেক্সাসের এম.ডি. অ্যান্ডারসন ক্যান্সার কেন্দ্রের জৈব প্রকৌশলী জিলিং শেন, এমন ইঁদুর তৈরি করেছেন, যাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মানুষের কোষ রয়েছে। কৌশলটি অভিনব! গর্ভবতী ইঁদুরের অ্যামনিওটিক তরলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় পূর্বে প্রস্তুতকৃত “অর্গানয়েড” বা ত্রিমাত্রিক মানব কোষ। এতে কোষগুলি নির্দিষ্ট অঙ্গে গিয়ে কাজ করে, ছড়িয়ে পড়ে না, এবং বেঁচেও থাকে দীর্ঘদিন। ফলাফল? জন্ম নেওয়া ইঁদুরদের প্রায় ১০ শতাংশের অন্ত্রে ছিল ১% মানব কোষ। এমনকি লিভারে পাওয়া যায় মানব অ্যালবুমিন প্রোটিন। এ থেকে প্রমাণ করে, এই কোষ শুধু অস্তিত্ব বজায় রাখেনি, কাজও করে চলেছে যথাযথ। বিজ্ঞান এখন শুধু প্রকৃতির অনুকরণ নয়, তার সীমাকেও চ্যালেঞ্জ করছে। আগামী দিনের মানুষ কি নিজের জন্য, অন্য প্রাণীর ভিতর ‘অঙ্গচাষ’ করবে? এই প্রশ্ন কল্পবিজ্ঞানের নয়, বরং নৈতিক সিদ্ধান্তের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে।