হাতির মস্তিষ্ক

হাতির মস্তিষ্ক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ মে, ২০২৫

হাতির বুদ্ধিমত্তা সর্বজনবিদিত। তাদের গভীর পারিবারিক বন্ধন, স্মৃতি এবং মানসিক সংবেদনশীলতা বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। প্রাণীজগতের অন্যতম প্রশংসিত সত্তা হওয়া সত্ত্বেও, তাদের মস্তিষ্ক নিয়ে তুলনামূলকভাবে কমই চর্চা করা হয়েছে। সম্প্রতি বার্লিনের হাম্বোল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্নস্টাইন সেন্টার ফর কম্পুটেশনাল নিউরোসাইন্স এবং লেবনেস ইনস্টিটিউটের জু এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ রিসার্চের বিজ্ঞানীরা হাতির মস্তিষ্কের গঠন নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেছেন। গবেষণায় এশিয়ান ও আফ্রিকান হাতির মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।
এশিয়ান হাতিরা সাধারণত আফ্রিকান হাতিদের তুলনায় উচ্চতায় ছোট। এদের কান ছোট এবং অধিকাংশ স্ত্রী হাতির দাঁত থাকে না। কিন্তু এদের মস্তিষ্কের ওজন বেশি। পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী এশিয়ান হাতির মস্তিষ্কের গড় ওজন ৫৩০০ গ্রাম, সেখানে আফ্রিকান স্ত্রী হাতির মস্তিষ্কের গড় ওজন ৪৪০০ গ্রাম। এছাড়া আফ্রিকান হাতির সেরিবেলাম বা লঘু মস্তিষ্ক মোট মস্তিষ্কের ২২% নিয়ে গঠিত। আর এশিয়ান হাতির ক্ষেত্রে ১৯%।
মানব শিশুদের মস্তিষ্ক জন্মের সময় তাদের প্রাপ্ত বয়সের মস্তিষ্কের আকারের ২০% হয়। হাতিদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পায়, যা অধিকাংশ প্রাণীর তুলনায় ব্যতিক্রমী। গবেষকরা মনে করেন হাতিদের জটিল সামাজিক জীবন এবং শেখার প্রক্রিয়া এর মূল কারণ হতে পারে।
হাতিদের সমাজে বয়স্ক হাতিদের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত দলের প্রধান স্ত্রী হাতির স্মৃতিশক্তি ও অভিজ্ঞতা পুরো দলের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এশিয়ান হাতিদের মানুষ পোষ মানাতে পারলেও আফ্রিকান হাতিদের পারেনি। গবেষকরা অনুমান করেছেন মস্তিষ্কের ওজন এই পার্থক্যের একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। অন্যদিকে আফ্রিকান হাতিদের দুটি ট্রাঙ্ক ফিঙ্গার(শুঁড়ের শেষের দিকের অংশ যা দিয়ে তারা বিভিন্ন জিনিস আঁকড়ে ধরতে পারে দক্ষ ভাবে)থাকার কারণে তারা তুলনামূলকভাবে আরো শারীরিক কাজ করতে পারে, যা লঘু মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও ইচ্ছাধীন নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কিত। হাতির মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা শুধুমাত্র মানুষের কৌতূহল মেটানোর জন্য নয়, এটি তাদের স্মৃতিশক্তি, সামাজিক আচরণ ও বুদ্ধিমত্তা বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষকরা হাতির বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করার জন্য উনিশটি হাতির মস্তিষ্কের বিরল এক সংগ্রহ বিশ্লেষণ করেছেন। এর বেশিরভাগই ছিল চিড়িয়াখানার হাতির বা বন্যহাতির যারা স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে বা তাদের যন্ত্রণা লাঘব করার জন্য মানুষ স্বেচ্ছায় এদের মুক্তি দিয়েছে। এই নমুনাগুলো অত্যন্ত দুর্লভ যা গবেষণার ফলাফলকে আরো মূল্যবান করে তুলেছে। তাঁরা হাতির সাথে মানুষের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। তারা দেখেছেন মানুষের মতোই হাতিরা শোক প্রকাশ করে, সহযোগিতা করে এবং পূর্বের অভিজ্ঞতাকে পাথেয় করে শেখে।
মনুষ্যসৃষ্ট ক্রিয়া-কলাপের ফলে হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিপূর্ণ। এই গবেষণা এদের সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে। যদি আমরা এদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই তাদের মস্তিষ্ক ও আচরণকে আরো গভীরভাবে বুঝতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 5 =