হাতে অতিরিক্ত একটি ধমনীর অস্তিত্ব

হাতে অতিরিক্ত একটি ধমনীর অস্তিত্ব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সুদূর ভবিষ্যতে আমাদের কেমন দেখতে হতে পারে সে বিষয়ে জল্পনা কল্পনা লেগেই থাকে বিজ্ঞানী মহলে। প্রায়শই আমরা বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে এই ভাবনা চিন্তা করে থাকি যেমন উচ্চতা, মস্তিষ্কের আকার বা ত্বকের রঙ। কিন্তু আমাদের শারীরবৃত্তীয় সূক্ষ্ম পরিবর্তন আমাদের ভাবতে বাধ্য করে যে বিবর্তন কতটা অপ্রত্যাশিত হতে পারে। যেমন আমাদের হাতে একটা অতিরিক্ত রক্তনালী থাকার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এবং বর্তমান প্রবণতা অনুসারে মাত্র কয়েক প্রজন্মের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য খুবই সাধারণ হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাডিলেডের গবেষকদের ২০২০ সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, মাতৃগর্ভে থাকাকালীন একটি ধমনী অস্থায়ীভাবে আমাদের হাতের মাঝখান থেকে নীচের কব্জির দিকে নেমে যায় এবং তা পরবর্তী সময়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সে ধমনীটি জন্মের থেকেই আমাদের শরীরে অক্ষত থাকছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি রয়েছে যাদের কব্জির নীচে একটি অতিরিক্ত ধমনী প্রবাহিত হয়। অধ্যয়ন দেখা গেছে যে সব ব্যক্তিরা বিশ শতকের শেষের দিকে জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের ৩০%-এর মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যায় অন্যদিকে যারা ১৮৮০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ে জন্ম নিয়েছেন তাদের মধ্যে এই প্রবণতা প্রায় ১০%। তবে গবেষকদের মতে বিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি অল্প সময়ের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। সমস্ত মানুষের মধ্যে মিডিয়ান আর্টারিটি বিকাশের প্রথম দিকেই গড়ে ওঠে। বিকাশের প্রায় আট সপ্তাহ সময়কালে এই ধমনীটি তার কাজের দায়ভার অন্য দুটি রক্তনালীকে ছেড়ে দেয় – রেডিয়াল (যা আমরা একজন ব্যক্তির নাড়ি দেখার সময় অনুভব করতে পারি) এবং উলনার ধমনীতে। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন না যে এই ধমনীটি বিলুপ্ত হবে। কিছু ক্ষেত্রে, এটি আরও এক মাস বা তার বেশি সময় ধরে শরীরে থাকে। কখনও কখনও শিশুর জন্মগ্রহণের পরেও এটি রয়ে যায়। আজ প্রাপ্তবয়স্কদের এই ধমনীটি থাকার প্রবণতা প্রায় তিনগুণ বেশি সাধারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন এই বৈশিষ্ট্যের সাপেক্ষে। গবেষকদের ধারণা এই বৃদ্ধি গর্ভাবস্থায় মায়েদের মধ্য ধমনী বিকাশ বা স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে জড়িত জিনের মিউটেশনের ফলে হতে পারে। তবে এই বিষয় নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, ২১০০ সালের মধ্যে বেশিরভাগ লোকের হাতের মধ্যবর্তী ধমনী থাকবে।
এই গবেষণাটি অ্যানাটমি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।