
এতদিন এটুকু জানা ছিল যে হামিংবার্ড ফুলের মধ্যে আট-পা ওয়ালা ছোটো ছোটো এক ধরণের পরজীবী কীট থাকে যারা ফুলের পরাগ আর মধু খেয়ে বাঁচে। কিন্তু তারা নিজেরা উড়তে পারে না, তাই গুনগুন আওয়াজ-তোলা হামিংবার্ড পাখির ঘাড়ে চেপে মধু আর পরাগ খায়। গবেষকরা আন্দাজ করেছিলেন, ফুলের কাছাকাছি এলে হামিংবার্ডদের পাখা-ঝাপটানির ফলে উদ্ভূত বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের একটা সম্পর্ক আছে এর সঙ্গে। এবার তাঁরা ল্যাবরেটরিতে আট পা-ওয়ালা ওই কীটের কতকগুলি বিশেষ প্রজাতি নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। প্রতিটি প্রজাতিকে তামার তড়িৎদ্বার থেকে উদ্ভূত একেকটি আলাদা বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের সম্মুখীন করেন তাঁরা। দেখা গেল, কীটগুলো কেবল বিশেষ কতকগুলি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের সাপেক্ষেই সাড়া দেয়, অন্যগুলিতে নয়। হামিংবার্ডদের ডানা ঝাপটানি থেকে যে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের উদ্ভব হয়, তার খুব কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যযুক্ত ক্ষেত্র ছাড়া অন্য ক্ষেত্রগুলিতে তারা সাড়া দেয় না। কী করে ওই কীট এই বাছাইটা করে? বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন, কীটের দেহ আর হামিংবার্ডের ঠোঁটের মধ্যে স্থির-বৈদ্যুতিক (ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক) আকর্ষণের একটা ভূমিকা আছে এখানে। দেখা গেল, কীটটি ৫৫০ ভোল্ট, ১২০ হার্ৎজ পরিমাণ স্থিরবিদ্যুৎ দ্বারা আহিত একটি তড়িৎদ্বারের প্রতিই আকৃষ্ট হচ্ছে। তড়িৎদ্বারটিকে দশ সেকেন্ডের জন্য অকেজো করে মাত্র কীটটি মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। তড়িৎদ্বারটি আবার চালু করা মাত্র সে তড়িৎদ্বারের দিকে রওনা হল। সেখানে পৌঁছবার পর তড়িৎদ্বারটি তাকে হাওয়ার মধ্য দিয়ে স্থির-বিদ্যুৎ আকর্ষণ-বলে টেনে নেয়। শুধু তাই নয়, কীটের সামনের দুটি পা কেটে বাদ দিলে তারা আর ওই ক্ষেত্রের দ্বারা আকৃষ্ট হয় না। তার মানে, সামনের দুই পায়ে তাদের বিদ্যুৎ-সংবেদী কোনো অঙ্গ থাকে। আরও জানা গেল, ওদের পায়ের লোমের সঙ্গে মাকড়সার পায়ের লোমের সাদৃশ্য আছে। মাকড়সারাও বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে সাড়া দেয়। কিন্তু কী করে ওই কীট হামিংবার্ড পাখির ঘাড়ে চড়ে? দেখা গেল তড়িৎদ্বারটিকে কীটের কাছে সরিয়ে আনলে সে স্থির-বিদ্যুৎ বলের টানে হাওয়ায় ভেসে তড়িৎদ্বারের ওপরে এসে হাজির হয়। তার মানে, কার্যক্ষেত্রে কোনো হামিংবার্ড ফুলের কছে এলে ওই কীট কেবল তার দিকে কয়েক পা এগিয়ে গেলেই কেল্লা ফতে। সে তখন আস্তানা গাড়ে পাখির নাকের ফুটোর মধ্যে। ফলে হাওয়ার ধাক্কায় উড়ন্ত পাখির গা থেকে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। ব্যস, আর কী। হামিংবার্ড যখন ফুলের মধু পান করে, কীটও তখন নাক থেকে ফুলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সম্মিলিতভাবে গবেষণাটি করেছেন আমেরিকার কানেটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়, কস্টা রিকার উষ্ণমণ্ডলীয় অধ্যয়ন-মণ্ডল আর ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানীদের একটি দল।
সূত্র: Carlos García-Robledo et al, Electric transportation and electroreception in hummingbird flower mites, Proceedings of the National Academy of Sciences (2025). DOI: 10.1073/pnas.2419214122