হায়াবুসা-২ মহাকাশযানের রোমাঞ্চকর চ্যালেঞ্জ

হায়াবুসা-২ মহাকাশযানের রোমাঞ্চকর চ্যালেঞ্জ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

হায়াবুসা ২ মহাকাশযান ২০৩১ সালে ক্ষুদ্র গ্রহাণু 1998 KY26–এ পৌঁছাবে বলে ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু সেটিকে নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমন সব তথ্য প্রকাশ করেছেন যা পুরো মিশনটিকে একই সঙ্গে বিস্ময়কর ও দুরূহ করে তুলেছে। ইউরোপীয় সাদার্ন অবজারভেটরি (ই এস ও )–সহ বিশ্বজুড়ে শক্তিশালী মানমন্দিরগুলোর সমন্বিত পর্যবেক্ষণে জানা গেছে—এই গ্রহানুটি আগের ধারণার তুলনায় প্রায় তিনগুণ ছোট, ব্যাস মাত্র ১১ মিটার, আর প্রতি ৫ মিনিটে একবার নিজের অক্ষে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। অর্থাৎ এটি একদিকে এতটাই ক্ষুদ্র যে একটি ঘরের ভেতরই ধরে যাবে, আবার অন্যদিকে এত দ্রুত যে এর গতিবিধি ধরাই দুষ্কর।

আগের হিসাব অনুযায়ী এর ব্যাস ছিল প্রায় ৩০ মিটার এবং ঘূর্ণনকাল প্রায় ১০ মিনিট। নতুন তথ্য প্রকাশের পর গবেষক টনি সান্তানা-রস মন্তব্য করেন—“বাস্তবতা আমাদের পূর্ব ধারণাকে পুরোপুরি বদলে দিল।“ এ আবিষ্কার হায়াবুসা ২–এর মহাকাশযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কারণ এমন এক ক্ষুদ্র, দ্রুত-ঘূর্ণায়মান পাথুরে বস্তুর কাছে পৌঁছে নিরাপদে সাময়িক অবতরণ এক বিরাট জটিলতার ব্যাপারই বটে।

হায়াবুসা২–এর মূল মিশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে রিউগু গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে। কিন্তু 1998 KY26 যেন একেবারেই ভিন্ন জগৎ। এটি আকারে মহাকাশযানের সমান, আর ঘূর্ণনে এতটাই চঞ্চল যে সঠিক কোণে পৌঁছানো বা পৃষ্ঠ স্পর্শ করা অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠবে। তবুও এই অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জই বিজ্ঞানীদের উত্তেজিত করছে বেশি, কারণ এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কোনো মহাকাশযান এত ছোট গ্রহাণুতে সরাসরি পৌঁছাবে।

পৃথিবী থেকে এত ক্ষুদ্র ও ক্ষীণবর্ণ গ্রহাণুকে দেখা সহজ ছিল না। গবেষকদের অপেক্ষা করতে হয়েছে যখন এটি খানিকটা কাছ দিয়ে যাবে সেই মুহূর্তটির জন্য—তারপর VLT–এর মতো দানবীয় টেলিস্কোপ ব্যবহার করেই মিলেছে মূল্যবান তথ্য। পর্যবেক্ষণে বোঝা যাচ্ছে—এর পৃষ্ঠতল বেশ উজ্জ্বল, এবং এটি সম্ভবত শক্ত শিলা দিয়ে গঠিত। তবে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এটিকে টিলার ধ্বংসাবশেষের গুচ্ছ হওয়ার সম্ভাবনাও বাতিল করছেন না।

এই গবেষণা শুধু হায়াবুসা২–এর জন্য নয়; গ্রহরক্ষা ও ভবিষ্যৎ মহাকাশ অনুসন্ধানের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০১৩ সালে রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্কে যে ক্ষুদ্র গ্রহাণু আঘাত হেনেছিল, তার আকারও খুব বেশি ছিল না। তাই 1998 KY26–এর মতো ছোট বস্তু সম্পর্কে এত নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করা প্রমাণ করে যে ভবিষ্যতে পৃথিবীর নিকটবর্তী এমন আরও ক্ষুদ্র বস্তুর বৈশিষ্ট্যও সফলভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।

সব মিলিয়ে, 1998 KY26–কে কেন্দ্র করে নতুন আবিষ্কার হায়াবুসা২–এর পথকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করলেও, বৈজ্ঞানিক দুনিয়াকে দিচ্ছে অভূতপূর্ব উত্তেজনা, সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানের নতুন মানচিত্র।

 

সূত্র : Japanese spacecraft faces a massive challenge from a house-size asteroid by T. Santana-Ros, P. Bartczak, et.al; Materials provided by ESO, 21st November, 2025.

DOI: 10.1038/s41467-025-63697-4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × two =