
প্রায় দুই হাজার বছর ধরে নিখোঁজ গ্রিক প্রাচীন গণিত গ্রন্থের দুই খণ্ড লুকিয়ে ছিল আরবি অনুবাদে। লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি একাদশ শতাব্দীর একটি আরবি পান্ডুলিপি উদ্ধার করেছেন । সেখানেই রয়েছে গণিতবিশারদ অ্যাপোলোনিয়াস অফ পার্গার ‘ কণিক’ নামের আট খণ্ডের বইয়ের পঞ্চম ও সপ্তম খণ্ডের বড় অংশ। খন্ডগুলি পাওয়াই যাচ্ছিল না। মনে করা হত , এগুলি “চিরতরে হারিয়ে গেছে”। গ্রিক ভাষায় এ বইটির কেবল প্রথম চারটি খণ্ডই টিকে ছিল। এই পান্ডুলিপিটি শুধু অনুবাদ নয়, এখানে রয়েছে আসল গ্রন্থের জ্যামিতিক চিত্র, ব্যাখ্যা, এমনকি এমন কিছু ব্যাখ্যা যা ইউরোপীয় কোনো গ্রন্থে কখনও দেখা যায়নি। “এই পান্ডুলিপিটি প্রমাণ করে, অন্ধকার যুগ নামে পরিচিত সময়টা আদতে ছিল ভাষার রূপান্তরের যুগ, আসলে জ্ঞান মুছে যায়নি, শুধু ভাষা বদলে বেঁচে ছিল।” আপাত হারানো রত্নটি পাওয়া গেছে নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহে। সপ্তদশ শতকে প্রাচ্যবিদ জ্যাকব গোলিয়াস এটিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সংগ্রহ করে নেদারল্যান্ডসে নিয়ে আসেন। তারপর শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি পড়ে ছিল, কারও চোখে পরেনি। কিন্তু আবিষ্কারের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দিকটা অন্য জায়গায়। এটি আবারও তুলে ধরে ইসলামি সুবর্ণ যুগের এক অবিস্মরণীয় বৈজ্ঞানিক কীর্তি। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার পণ্ডিতরা শুধু গ্রিক গ্রন্থ অনুবাদ করেননি, সেই জ্ঞান সংরক্ষণ করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন এবং তাতে নতুন ধারণা যোগ করেছেন। যখন ইউরোপে জ্ঞানের আলো নিবতে বসেছিল, তখন বাগদাদ, কায়রো ও করডোভায় অঙ্কশাস্ত্রের আগুন জ্বলছিল দীপ্তিময়ভাবে।“তারা শুধু মশাল বহন করেননি,তারা তার শিখা আরও উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন।”এই সন্ধান শুধু গণিতের ইতিহাসেই বিরাট আলোকপাত নয়, এটি ইতিহাসকে নতুন করে লেখার আহ্বান। এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় পাড়ি দিয়ে, হাজার বছরের ধুলো ঝেড়ে, অ্যাপোলোনিয়াস ফিরে এলেন, আরবি পংক্তিমালায়, জ্যামিতির রেখাচিত্র আঁকতে।