হিমায়িত অঞ্চল গলে জ়ম্বি ভাইরাসের পুনরাবির্ভাব

হিমায়িত অঞ্চল গলে জ়ম্বি ভাইরাসের পুনরাবির্ভাব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ জুলাই, ২০২৪
ভাইরাসের-পুনরাবির্ভাব

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর হিমায়িত অঞ্চল গলে প্রাণীজগতে রাজত্ব করতে চলেছে বহু হাজার বছর পুরনো ‘জ়ম্বি’ ভাইরাস। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের গ্রহের পারমাফ্রস্টের মধ্যে আটকে থাকা অদেখা অজানা জিনিস প্রকাশিত হয়ে পড়ছে। বরফের স্তর গলে যাওয়ার ফলে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, যে সব জীব বিলুপ্ত বলে মনে করা হয়েছিল তা উন্মোচিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাচীন “জম্বি ভাইরাস” যা হাজার হাজার বছর ধরে পুরোপুরি সংরক্ষিত ছিল। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করছেন যে এই দীর্ঘ-সুপ্ত জীবাণুগুলো এখনও সংক্রামিত এবং ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাশিয়া, জার্মানি এবং ফ্রান্সের গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দল থেকে এই সতর্কতা এসেছে। দলটিতে জিনোমিক্স, মাইক্রোবায়োলজি এবং জিওসায়েন্সের বিশেষজ্ঞরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রায় এক দশক ধরে এই পুনরুত্থিত জম্বি ভাইরাস ট্র্যাক করছেন। গবেষণার ফলাফল এই বছরের শুরুতে ভাইরাস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। ভাইরাসের পুনরাবির্ভাব প্রথম নিদর্শন দেখা যায় এক অপ্রত্যাশিত জায়গায়। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে, সুইডিশ প্যাথলজিস্ট ডঃ জোহান ভি. হাল্টিন ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আরএনএ খুঁজে পান এক ইনুইট মহিলার ফুসফুসে যাকে প্রায় ৮০ বছর আগে আলাস্কার ব্রেভিগ মিশনের বাইরে একটি প্রত্যন্ত গ্রামের কাছে ইনফ্লুয়েঞ্জার শিকারদের একটি গণকবরে সমাধি দেওয়া হয়েছিল। আবিষ্কারটি সম্ভব হয়েছিল কারণ পারমাফ্রস্ট, ভাইরাসের পর্যাপ্ত আরএনএ সংরক্ষণ করেছিল, যার ফলে গবেষকরা ১৯১৮ সালের পুরো স্ট্রেনের জিনোমটি সিকোয়েন্স করতে সক্ষম হন। ২০১৪ সালে আরেকটি জম্বি ভাইরাস, পিথোভাইরাস সাইবেরিকাম, সাইবেরিয়ার পারমাফ্রস্টের ১০০ ফুট নীচে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এই প্রাচীন ভাইরাসটি এতটাই বিশাল যে এটি একটি হাই স্কুলের সাধারণ লাইট মাইক্রোস্কোপের নীচে দেখা যায়। যদিও এই ভাইরাসটি মানুষ বা প্রাণীদের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকির কারণ নয়, তবে এর পুনরাবির্ভাব একটি সতর্কতা হিসেবে কাজ করে। বিজ্ঞানীদের অনুমান মানুষ এবং প্রাণী সহ বিভিন্ন হোস্টের জন্য নির্দিষ্ট ভাইরাসের সংক্রামক কণা সম্ভবত প্রাচীন পারমাফ্রস্টে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। অন্যদিকে ১৯৮০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্মল পক্স বা গুটিবসন্ত নির্মূল করেছিল। কিন্তু ২০০৪ সালে, ফরাসি এবং রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা রাশিয়ার তুন্দ্রায় হিমায়িত ৩০০ বছর বয়সী সাইবেরিয়ান মমিতে গুটিবসন্তের চিহ্ন খুঁজে পান। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে হাজার হাজার বছর ধরে ভেসে থাকা হিমবাহ গলতে শুরু করায় এমনিতেই জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি, হ্রদের একেবারে তলদেশে চির হিমায়িত অঞ্চলে আটকে থাকা জীবাণু জলস্তরের মধ্যে মিশতে শুরু করে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বরফের তলায় সুপ্ত অবস্থায় থাকা এই বস্তুগুলো জলে মিশতে থাকলে প্রাণীজগতের জন্য তা সত্যিই আশঙ্কাজনক।