১২০০০ বছরের প্রাচীন গাছ -পাণ্ডো

১২০০০ বছরের প্রাচীন গাছ -পাণ্ডো

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

 

পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো বিশালাকার এক গাছের মর্মরধ্বনি আকাশে বাতাসে নয় তার শিকড়ে শোনা যাচ্ছে। একটাই গাছ নিয়ে গোটা এক অরণ্য। ৪৭০০০ কাণ্ড নিয়ে পাণ্ডো নামে এই গাছ উটাহ-তে ১০০ একর জুড়ে তার শিকড় বিস্তার করেছে। একাকী এই পুরুষ গাছ কোয়াকিং অ্যাস্পেন, যার বৈজ্ঞানিক নাম – পপুলাস ট্রেমুলয়েডস তার ভরের (৬০০ মেট্রিক টন) জন্য পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম। আনুমানিক ১২০০০ বছর ধরে জীবিত ২৪ মিটার কাণ্ডের এই গাছের শব্দ ধরা হয়েছে। ২০২৩ সালে ফ্রেন্ডস অফ পাণ্ডোর প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা ল্যান্স ওডিট বলেছেন এই গাছের শব্দ শুনতে গিয়ে আশ্চর্য ফলাফল পাওয়া গেছে। বায়ু শব্দ কম্পনে রূপান্তরিত হয়ে শব্দ সৃষ্টি করে শিকড়ের মধ্যে ভ্রমণ করছে। আর এটা গাছকে জখম না করেও পাণ্ডোর বিশাল লুকানো হাইড্রোলিক সিস্টেমের ভিতরের কাজ প্রকাশ করতে পারছে।
শব্দ শিল্পী জেফ রাইস পরীক্ষামূলকভাবে একটা শাখার গোড়ায় ফাঁপরের ভেতরে একটি হাইড্রোফোন স্থাপন করে, এটা গাছের শিকড়ের সাথে জুড়ে দিয়েছিলেন। হাইড্রোফোন শিকড়ের পৃষ্ঠ থেকেও কম্পন ধরতে পারে। তিনি কানে হেডফোন লাগিয়ে অবাক হয়ে যান। তার কথা অনুযায়ী – কিছু একটা ঘটছিল। একটা ক্ষীণ শব্দ হচ্ছিল। একটা বজ্রঝড়ের মতো সেই শব্দ বাড়তে থাকে। হাইড্রোফোন যেন একটা ভয়ঙ্কর নিম্ন গর্জন ধরছে। তিনি যা শুনেছেন, তার মতে বনের লক্ষ লক্ষ পাতার শব্দ, গাছের কম্পন ডালপালা ভেদ করে পৃথিবীর গভীরে চলে যাচ্ছে৷ গার্ডিয়ান জার্নাল জানাচ্ছে আমেরিকার অ্যাকোস্টিক্যাল সোসাইটির ১৮৪ তম সভায় তার রেকর্ডিংগুলি উপস্থাপন করা হয়।
গাছের গুঁড়ির গায়ে ধপ ধপ করে চাপড় মেরে ৯০ ফুট দূরত্ব থেকে হাইড্রোফোনে সেই শব্দ শোনা গেছে, কিন্তু বাতাসে তা শোনা যায়নি। এর থেকেই বোঝা যায়, গাছের শিকড়গুলো একে অন্যের সাথে জড়িত। কোয়াকিং অ্যাস্পেন -এর শিকড় একে অন্যের সাথে মিশে থাকে তবে পাণ্ডোর আকৃতির জন্য তা অনন্য। তবে এদের পরাগায়ন খুব কম হওয়াতে এই গাছ বীজ থেকে বংশবিস্তার করেনা। এদের পুরুষ বা মহিলা প্রজাতির ক্লোন থেকে নতুন গাছ তৈরি হতে থাকে। পাণ্ডোর ডালপালা, শিকড়, পোকামাকড়ের কলোনি, এতে বসবাসকারী প্রণীদের বাস্তুতন্ত্র নিয়ে গবেষণার কাজ চলছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই বিশালাকার গাছ নষ্ট হতে শুরু করেছে, এর আয়ুষ্কাল সীমিত। মানুষের কাজ এর জন্য দায়ী, নির্বিচারে পশু হত্যায় তৃণভোজী পশুর সংখ্যা বেড়েছে, যারা এই গাছের নানা অংশ খেয়ে এর জীবন সীমিত করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − eleven =