উত্তর অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন গুহা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রথম মানুষের ব্যবহৃত পাথর ও কারুশিল্পের যন্ত্রাদি, গুহাচিত্র এবং অন্যান্য নিদর্শন । নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, প্রথম মানুষ অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে পৌঁছায় পঁয়ষট্টি হাজার বছর আগে । কারুকাজের হাত বেশ পোক্ত ছিল তাদের ।
২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মেয়াদে অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম মানববসতি মাদজেদবেবে-র খননকার্যে নৃতত্ত্ববিদরা আদিম নিদর্শনের তিনটি স্তর খুঁজে পেয়েছেন । সবচেয়ে পুরনো গভীরতম স্তরে পাওয়া গেছে দশহাজারের বেশী প্রত্নসামগ্রীর ধ্বংসাবশেষ । পৃথিবীর প্রথম পালিশ করা কুঠারের মাথা, অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম শস্যপেশাই যন্ত্র, রঙ তৈরির যন্ত্র, উনুন এবং আরও বিভিন্ন নিদর্শনের অংশবিশেষ পাওয়া গেছে খননে ।
সিডনী ইউনিভার্সিটির আর্কিওলজিস্ট পিটার হিস্কক মনে করেন, অস্ট্রেলিয়ায় আসা প্রথম মানুষ যথেষ্ট দক্ষ ছিল । রাতের জন্য আলোর ব্যবস্থা, খাবারের জন্য শস্যপেষা বা তাদের গুহার গায়ে রঙের ছাপ- এইসব তাদের পারদর্শিতার নমুনা বলেই দাবী হিস্ককের ।
৪৭০০০ থেকে ৬০০০০ বছরের মধ্যেই কোনোও এক সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় পা রেখেছিল প্রথম মানুষ, আগের অনুমান তাই’ই বলে । কিন্তু, সহগবেষক জেনোবিয়া জেকবস বলছেন, নৃতত্ত্ববিদদের মধ্যে এই নিয়েই ধন্দ ছিল, কারণ কোনো স্পষ্ট প্রমাণ এতদিন মেলেনি ।
জেকবস ও তাঁর সহকর্মীরা ‘অপটিক্যালি স্টিমুলেটেড লুমিনেসেন্স ডেটিং’ নামের নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ করেছেন । খনিজ দানা শেষ কবে সূর্যালোকের মুখ দেখছে, এই পদ্ধতিতে সেই প্রাচীনত্ব নির্ণয় করা সম্ভব । রেডিওকার্বন ডেটিং-এর সাহায্যে আগুনের চিহ্ন থেকে চারকোলের বয়স জানা যায় । ভূস্তরের নীচে ২.১৫ থেকে ২.৬০ মিটার খননে পাওয়া সর্বাধিক প্রাচীন স্তরের বয়স আনুমানিক ৫৩০০০-৬৫০০০ বছর ।
পিটার হিস্ককের মতে, নিখুঁততর পরিক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন । কারণ, বালির নীচে প্রোথিত নিদর্শনগুলি সময়ের সাথে সাথে সামান্য স্থানপরিবর্তনে বাধ্য ।
আদিম মানুষ ঠিক কোন সময়ে আফ্রিকা ছেড়ে পৃথিবীর অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়লো, গবেষণা থেকে উঠে আসতে পারে এমন বহুকাঙ্ক্ষিত তথ্যও । বিভিন্ন মহাদেশে আদিম হোমিনিডের সাথে আধুনিক মানুষের মিলনে কীভাবে প্রজাতির বিকাশ ঘটেছিল, উদাহরণ হিসেবে ইওরোপের নিয়ারডার্থাল বা এশিয়ার ডেনিসোভান কীভাবে এলো পৃথিবীতে সেই সুলুকসন্ধানও দিতে পারে এই গবেষণা ।