
মৃত্যু হল প্রকৃতপক্ষে সমস্ত অত্যাবশ্যক ক্রিয়াকলাপের স্থায়ী সমাপ্তি। এটি অনির্দেশ্য, যার সম্বন্ধে আগে থেকে বলা যায় না। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে , যারা শারীরিকভাবে সুস্থ তাদের বিভিন্ন রোগের কারণে অকালমৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক কম।আবার, উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের গবেষকরা একটি নতুন গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, কৈশোরের শেষদিকে যাদের শারীরিক সক্ষমতা যত বেশি হয় তাদের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সম্ভাবনাও কম থাকে। এই গবেষণাটি থেকে এই ইঙ্গিত বেরিয়ে আসে যে আগেকার গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফলাফলে হয়তো কিছু ভুল ছিল।
এই গবেষণায় প্রায় ১.১ মিলিয়ন সুইডিশ পুরুষের ডেটা( উপাত্ত) ব্যবহার করা হয়েছে যারা ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে ছিল। এদের গড় বয়স ১৮ বছর এবং এদেরকে ৬০ বছর বয়স অবধি অথবা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা গেছে, শারীরিকভাবে খুব সক্ষম ব্যক্তিদের মধ্যে হৃদরোগজনিত কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি ৫৮% কম, ক্যান্সারে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩১% কম এবং যেকোনো কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি ৫০%এরও কম ।
পরবর্তী পর্যায়ে, গবেষকরা পরীক্ষা করেছেন যে তাদের মৃত্যুর কারণগুলির সাথে শারীরিক সুস্থতার কোন সম্পর্ক রয়েছে কিনা। বিশেষ করে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, যেমন গাড়ি দুর্ঘটনা, ডুবে যাওয়া বা হত্যাকাণ্ড। গবেষকরা অনুমান করেছিলেন যে শারীরিক সুস্থতার সাথে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়। কিন্তু তারা দেখেছেন উচ্চ সক্ষমতাযুক্ত ব্যক্তিদের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঝুঁকি ৫৩ শতাংশ কম।
এই ফলাফলের সত্যতা যাচাই করার জন্য বিজ্ঞানীরা তাদের ভাইবোনদের মধ্যেও একই পদ্ধতিতে অকাল্মৃত্যুর সম্ভাবনা তুলনা করে দেখেন, ভাইবোনদের একই রকম অভ্যাস, পরিবেশগত ও জিনগত কারণগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য।
পূর্ববর্তী পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণাগুলিতে বলা হয়েছিল যে ভালো শারীরিক সুস্থতা থাকলে মৃত্যুর হার কমে যায়। বর্তমান গবেষকরা বলছেন, এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে শারীরিক পটুতার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর প্রভাবকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
গবেষক মার্সেলবালিন বলেন, এই গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে যে পর্যবেক্ষণমূলক আগেকার গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বস্তুত অতিরঞ্জিত হতে পারে। নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হলে, আমাদের অবশ্যই সঠিক কারন ও তার প্রভাব বুঝতে হবে যাতে জনগণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
এই গবেষণা প্রমাণ করেছে যে শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা নয়, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রশ্ন করা হলে আরও সঠিক ফলাফল পাওয়া সম্ভব। তাই শারীরিক পটুতা ও শারীরিক কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম হলেও, এর প্রকৃত প্রভাব নির্ধারণে আরও গবেষণা প্রয়োজন।