অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন দিশা

অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন দিশা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৫ অক্টোবর, ২০২৩

নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে একটি বানরের শরীরে একটি ছোটো শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের পর দেখা গেছে যে বানরটি প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় বেঁচে ছিল। বিজ্ঞানীরা আশা রাখেন যে এই ধরনের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কৌশল ভবিষ্যতে মানুষের দেহের বিভিন্ন প্রজাতির অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ক্ষতিগ্রস্ত বা অসুস্থ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য নতুন অঙ্গের চাহিদা সরবরাহের চেয়ে অনেক বেশি। সেখানে প্রায় ১০৪০০০ আমেরিকান অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য নাম নথিভুক্ত করেছে যার মধ্যে প্রায় ৮৯,০০০ মানুষের কিডনির প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। ফলত বিজ্ঞানীরা অন্য প্রজাতির থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন, অর্থাৎ মানুষের শরীরে অন্যান্য প্রাণীর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ভাবছেন। এটি অঙ্গের প্রাপ্যতার এই বিশাল ঘাটতি সমাধানের একমাত্র কার্যকর সমাধান বলে মনে করছেন ইজেনেসিসের প্রেসিডেন্ট মাইক কার্টিস। কিন্তু বিষয়টি বেশ কঠিন কারণ শূকরের অঙ্গের সাথে মানুষের দেহের অঙ্গের কোনো আণবিক মিল নেই। তাছাড়াও শূকরের দেহের কোশকে মানুষের শরীরের ইমিউন সিস্টেম “অপরিচিত” বলে প্রত্যাখ্যান করতে পারে। বিজ্ঞানীরা তাই দাতা প্রাণীদের জিনোমকে পরিবর্তন করে শূকরের কিডনিকে যতটা সম্ভব মানুষের মতো তৈরি করেন যাতে মানুষের শরীর এটিকে চিনতে পারে এবং অবিলম্বে এটিকে আক্রমণ না করে। গবেষকের দল রিপোর্ট করেছেন যে একজন ব্যক্তি যার মস্তিষ্ক মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে প্রতিস্থাপিত শূকরের কিডনি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে, এবং সাত দিনের গবেষণা কালে দেখা গেছে সেটি প্রস্রাবও তৈরি করতে সক্ষম। কার্টিসের দল বিভিন্ন শূকরের কিডনি পরিবর্তন করে সেই কিডনি বানরে প্রতিস্থাপন করে। যেহেতু এই কিডনি জিনগতভাবে মানুষের জন্য তৈরি করা, তাই বিজ্ঞানীরা বানরদের শক্তিশালী ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ দেন যাতে তাদের শরীর এই নতুন অঙ্গ প্রত্যাখ্যান না করে। লকের মতে এই ধরনের প্রাণীদের উপর পরীক্ষা করা প্রয়োজন কারণ তারা দীর্ঘমেয়াদীভাবে অঙ্গের কাজ প্রদর্শন করতে পারে, যা মস্তিষ্কের মৃত্যুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখানো কঠিন। বিজ্ঞানীরা দেখেন যে শূকরের শর্করা শূণ্য ও মানব জিন বহনকারী কিডনি প্রতিস্থাপিত ১৫টি বানরের মধ্যে ৮টি ১৭৬ দিন বা তার বেশি সময় বেঁচে ছিল। একটি বানর কিডনি প্রতিস্থাপনের পর ৭৫৮ দিন বেঁচে ছিল। যে সমস্ত শূকরের কিডনিতে মানুষের জিন অনুপস্থিত ছিল সেই বানরগুলো মাত্র ২৪ দিনও বেঁচে থাকতে পারেনি। বিজ্ঞানীরা তাই আশাবাদী যে একটি শূকরের কিডনি দুই বছর ধরে বানরের শরীরে কাজ করতে সক্ষম, যদিও এই বিষয়ে এখনও অনেক গবেষণা বাকি রয়েছে।