অজ্ঞান ইঁদুরের জ্ঞান ফেরানো

অজ্ঞান ইঁদুরের জ্ঞান ফেরানো

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ মার্চ, ২০২৫

ইঁদুররা তাদের অজ্ঞান সঙ্গীর জ্ঞান ফিরিয়ে আনে! এই আচরণ নিয়ে নতুন এক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি ইঁদুর যখন দেখে অন্য কোনো ইঁদুর জ্ঞান হারিয়েছে, তৎক্ষণাৎ তার জ্ঞান ফেরাতে, সুস্থ ইঁদুরটি তার মুখ চাটে এবং জিভ ধরে টানাটানি শুরু করে। ফলে অজ্ঞান ইঁদুরটি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। এটিই হল, ইঁদুরদের প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি। সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক উইনজিয়ান সান জানিয়েছেন, “আহত বা অসুস্থ প্রাণীদের সাহায্য করতে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এই ধরনের আচরণ দেখা যায়”।
ইঁদুরদের ‘বিপদ কালীন সহায়তা আচরণ’ সম্পর্কিত গবেষণায় দেখা গেছে, ইঁদুররা সংজ্ঞাহীন সঙ্গীর সাথে শারীরিক যোগাযোগে বেশি সময় ব্যয় করে। তাদের ক্ষেত্রে এই জিভ দিয়ে চেটে পরিষ্কার করার তীব্রতা বেড়ে যায়। যখন সঙ্গীর জ্ঞান ফেরে তখন প্রাথমিক চিকিৎসাকারী ইঁদুর পরিষ্কার করার কাজ বন্ধ করে দেয়। জ্ঞানহীন সঙ্গীর অবস্থা বুঝে নিতে তারা দৃশ্যমান সংকেতের ওপর নির্ভর করে না। অন্ধকারের মধ্যেও কেবল গন্ধ নিয়েই তারা সহজে আঁচ করে নেয়, তাদের সঙ্গী জ্ঞান হারিয়েছে। ১৩ মিনিটের একটি পরীক্ষায় গবেষকরা দেখেন, অজ্ঞান সঙ্গীর সাথেই প্রায় ৪৭% সময় ব্যয় করছে সুস্থ ইদুরগুলি। এমনকি যেসব ইঁদুর একে অপরকে চিনত, তাদের মধ্যে আরও আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ লক্ষ্য করা গেছে চিকিৎসার অংশ হিসাবে। জিভ ধরে টানাটানি করার প্রবণতা প্রায় ৫০% এর ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা গেছে। এই গবেষণার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল, প্রাণীদের মধ্যে অজ্ঞান, এমনকি সদ্য মৃত সঙ্গীদের পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সহজাত জরুরি প্রতিক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়া। গবেষণায় ব্যবহৃত ইঁদুরগুলির মধ্যে কিন্তু কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই, পুনরুজ্জীবন-সংক্রান্ত আচরণ দেখা গেছে। আহত বা অসুস্থ অন্য প্রাণীদের সাহায্য করার এই প্রবণতা, বিভিন্ন প্রজাতিতেই বর্তমান। যেমন ডলফিন, হাতি এবং অ-মানব প্রাইমেট। “এই আচরণগুলির মধ্যে প্রায়ই স্পর্শ করা, পরিষ্কার করা, ঠেলা দেওয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে আঘাত করার মতো শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ”
অন্যদের সাহায্য করার সহজাত প্রবণতাই এর মুখ্য কারণ কিনা তা নিয়ে গবেষকরা নিশ্চিত নন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস-এর অন্য গবেষকরা মনে করছেন, এই আচরণের পিছনে আছে অক্সিটোসিন নামক একটি হরমোনের ক্রিয়া। সামাজিক বন্ধন, যৌন সম্পর্ক, এবং শিশু জন্মের ক্ষেত্রে অক্সিটোসিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা এবং হাইপোথ্যালামাস নামক অঞ্চলে অক্সিটোসিননের নিঃসরণ ঘটে আর তারই দরুন এমন আচরণের সৃষ্টি হয়। ‘প্রেমের হরমোন’ নামে পরিচিত অক্সিটোসিন, মানুষের মধ্যে বিশ্বাস এবং স্নেহের জন্ম দেয় এবং সামাজিক বন্ধন তৈরি করে বলে সান ব্যাখ্যা করেন। ভবিষ্যতের গবেষণা এই আচরণের সাথে জড়িত নির্দিষ্ট স্নায়বিক সার্কিট (বর্তনী) চিহ্নিত করার উপর মনোযোগ নিবদ্ধ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 12 =