
নিয়ারডারথাল জিন (আলীল) আজও আমাদের মস্তিষ্ক ও আচরণে প্রভাব ফেলে চলেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা অটিজম এবং নিয়ারডারথাল ডিএনএর মধ্যে একটি অজানা সংযোগকে সামনে আনছে। ৪০,০০০–৪০০,০০০ বছর আগে ইউরেশিয়ার গুহাগারে বসবাসকারী নিয়ারডারথালের সঙ্গে এই আন্ত:সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বলা হচ্ছে, একসময় আফ্রিকার বাইরে বাসকারী আধুনিক মানুষের জিনোমে ১-৪% নিয়ারডারথালের ডিএনএ এখনও রয়েছে। এই ডিএনএ আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা, ত্বকের বৈশিষ্ট্য এবং মস্তিষ্কের গঠনে প্রভাব ফেলে। অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) একটি বিকাশঘটিত সমস্যা। এটি সামাজিক যোগাযোগে সীমাবদ্ধতা, একই আচরনের পুনরাবৃত্তি এবং অতি গভীর মনোযোগের মাধ্যমে চিহ্নিত হয়। এটি প্রায় ৮০–৯০% ক্ষেত্রে জিনগত প্রভাবের কারণেই ঘটে থাকে। ক্লেমশন এবং লোয়োলা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ৩,৪৪২ জনের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখেন, কিছু নিয়ারডারথাল জিন, মস্তিষ্কের বিকাশে প্রভাব ফেলে। অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এসব জিন বেশি দেখা যায়। ২৫টি ‘ব্রেন-কিউটিএল’ জিন চিহ্নিত হয়েছে, যা অটিস্টিক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি থাকে। ‘ব্রেন-কিউটিএল’ হল, মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট কোনো জৈব বা আচরণগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জিনের অংশ বা অবস্থান। SLC37A1 জিন, লক্ষণহীন অটিস্টিকদের মধ্যে এপিলেপ্সিসহ ৬৭% এই পলিমরফিজম বহন করে। অথচ যাৱা অটিস্টিক নয় তাদের মধ্যে এর পরিমাণ ২২%। আবার USP47 জিন হোয়াইট হিস্পানিক অটিস্টিক পুরুষদের মধ্যে এপিলেপ্সিসহ ৮০% প্রভাবিত করে। অন্যদিকে COX10 জিন নির্দিষ্ট গোষ্ঠীতে বিরল হলেও মস্তিষ্কের স্নায়বিক ভারসাম্য বিঘ্নিত করে। অটিস্ট রোগীদের মধ্যে নিয়ারডারথালের ডিএনএ মোটামুটি সমান থাকলেও, নির্দিষ্ট পলিমরফিজমের ঘনত্ব বেশি থাকে। এই পলিমরফিজমগুলোর প্রভাব নির্ধারণ করা জটিল। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে নিয়ারডারথালের ডিএনএ শুধুমাত্র স্মৃতিচিহ্ন নয়, এটি আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। এই তথ্য অটিজমের স্নাযুবিজ্ঞান বোঝার নতুন দিক খুলে দেয়, রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে।
সূত্র: The journal Molecular Psychiatry.