অটিজম-এর শ্রেণীবিভাগ ও চিকিৎসা

অটিজম-এর শ্রেণীবিভাগ ও চিকিৎসা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ আগষ্ট, ২০২৫

নতুন এক গবেষণায় অটিজম সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ভাবনায় বড় পরিবর্তন এসেছে। আগে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD) কে একটাই রোগ হিসেবে দেখা হতো। যার লক্ষণ ছিল, দেরিতে ভাষা শেখা, সামাজিক সমস্যা তৈরি করা এবং বারবার একই কাজ করা। কিন্তু এই লক্ষণগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হওয়ায় এককভাবে বিষয়টি বোঝা কঠিন ছিল। অভিভাবক, চিকিৎসক ও গবেষকরা অটিজম শনাক্ত করতে অনেক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হতেন।

কিন্তু সম্প্রতি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় ও সিমন্স ফাউন্ডেশনের যৌথ গবেষণায় ৫,০০০ শিশুর তথ্য বিশ্লেষণ করে চারটি আলাদা ধরনের অটিজম শনাক্ত করা হয়েছে। গবেষকরা শিশুর বিকাশের ধাপ, সামাজিক মেলামেশার সমস্যা ও আচরণ প্রভৃতি ২৩০টির বেশি বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে কম্পিউটেশনাল মডেলের মাধ্যমে তাদের চারটি দলে ভাগ করেছেন—

১. সামাজিক ও আচরণগত সমস্যাপীড়িত দল: এই গোষ্ঠীর শিশুদের আচরণগত সমস্যা থাকে, কিন্তু ভাষা ও শারীরিক বিকাশ স্বাভাবিক।
২. দেরিতে বিকশিত মিশ্র অটিজম: এদের বিকাশ দেরিতে হয়, তবে সাধারণত উদ্বেগ বা বিঘ্নজনক আচরণ থাকে না। এদের মধ্যে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জিনের পরিবর্তন বেশি থাকে।
৩. মাঝারি মাত্রার সমস্যাপীড়িত দল: তুলনামূলকভাবে হালকা উপসর্গ ও কম মানসিক সমস্যা দেখা যায়।
৪. ব্যাপকভাবে প্রভাবিত দল: এটাই সবচেয়ে জটিল শ্রেণী। এই গোষ্ঠীর শিশুদের গুরুতর বিকাশজনিত ও মানসিক সমস্যা থাকে, পাশাপাশি বারবার একই কাজ করার প্রবণতাও বেশি।

গবেষণায় দেখা গেছে, উপরের প্রতিটি গোষ্ঠীর পেছনে আলাদা আলাদা জিনগত কাঠামো সক্রিয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু শিশুর মধ্যে এমন জিন অভিব্যক্তি দেখা যায় যা তার বাবা-মা থেকে আসেনি, নতুনভাবে সৃষ্ট। এছাড়া এদের জিনের সক্রিয় হওয়ার সময়ও ভিন্ন। যেমন, সামাজিক ও আচরণগত সমস্যাপীড়িত গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে জিন জন্মের পর সক্রিয় হয়, কিন্তু মিশ্র গোষ্ঠীতে জিন গর্ভাবস্থাতেই মস্তিষ্ক গঠনে প্রভাব ফেলে।
এই শ্রেণীবিভাগ শুধুমাত্র গবেষণার জন্য নয়, বাস্তব চিকিৎসাতেও বড় পরিবর্তন আনবে। চিকিৎসকরা এখন নির্দিষ্ট অটিজমের ধরনটি বুঝে উন্নত চিকিৎসা পরিকল্পনা করতে পারবেন। স্কুলে থেরাপি নির্বাচন ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও আরও সুচিন্তিত হবে। প্রিন্সটনের গবেষক চন্দ্রা থিসফেল্ড বলেন, “ জিনগত ও চিকিৎসাগত তথ্য একসঙ্গে বিশ্লেষণ করে আমরা অবশেষে অটিজমের প্রকৃত ছবিটা দেখতে পাচ্ছি।” সহ-লেখক নাটালি সাওয়ারওয়াল্ড জানিয়েছেন, “জিনের ভিন্নতার ভিত্তিতে অটিজমের উপশ্রেণি নির্ধারণ স্নায়ুবিকাশ ঘটিত অসুখে নির্দিষ্ট ওষুধের ক্ষেত্রে এক বড় অগ্রগতি।” ভবিষ্যতে এই পদ্ধতি অন্যান্য জটিল অসুখের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে পারে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

সূত্র : Nature Genetics (09/07/2025)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + thirteen =