
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গভীর সমুদ্রের অজানা জগৎ থেকে আবিষ্কার করেছেন একসঙ্গে তিনটি নতুন মাছের প্রজাতি, যাদের নাম স্নেইলফিশ। যার মধ্যে সবচেয়ে চর্চিত প্রজাতিটি হলো বাম্পি স্নেইলফিশ (কেয়ারপ্রক্টাস কোলিকুলি )। ২০১৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূল থেকে প্রায় ৩,২০০ মিটার নীচে, এম বি এ আর আই-এর রিমোট কন্ট্রোল সাবমেরিন ডক রিকেটস প্রথমবারের মতো এর ছবি তোলে। মাত্র ৯ সেন্টিমিটার লম্বা এই মাছটির গায়ে গোলাপি রঙ, অদ্ভুত উঁচুনীচু আব, আর লম্বা পাখনা।
কিন্তু শুধু এই নয়, আরও দুটি অজানা সঙ্গীরও খোঁজ মিলেছে। একটির নাম ডার্ক স্নেইলফিশ (কেয়ারপ্রক্টাস ইয়ান্সেই), যার পুরো শরীর কালো, মুখ চওড়া আর চোখ বড় বড়। অন্যটি হলো স্লিক স্নেইলফিশ (প্যারালিপারিস ইম), লম্বাটে কালো শরীর, তীক্ষ্ণ চোয়াল আর বিশেষ কোনো সাকশন ডিস্ক ছাড়াই টিকে থাকে। তিনটি প্রজাতিকেই গবেষকরা ল্যাবে বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হন যে এগুলো আগে কখনও বিজ্ঞানের কাছে পরিচিত ছিল না।
স্নেইলফিশ পরিবার(লিপারিডি) আসলেই বিস্ময়কর। এদের শরীর নরম, জেলির মতো; অনেকের পেটের নীচে বিশেষ চাকতি থাকে, যেটা দিয়ে তারা সমুদ্রতল বা পাথরে সেঁটে থাকতে পারে। কেউ কেউ আবার কাঁকড়ার পিঠে চড়ে বেড়ায়। পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরে বসবাসকারী মাছও এক ধরনের স্নেইলফিশ।
গবেষকরা বলেন, গভীর সমুদ্রের প্রতিটি নতুন প্রাণীকে দেখে বোঝা যায় কীভাবে জীবন কঠিনতম পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। প্রচণ্ড চাপ, ঠান্ডা আর নিঝুম অন্ধকারেও এই মাছেরা রঙ, গঠন আর আচরণে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে।
এম বি এ আর আই গত ৩৮ বছরে ৩০০-রও বেশি নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেছে। তাদের মতে, প্রতিটি নতুন প্রাণী যেন সমুদ্রের বিশাল ধাঁধার একটি টুকরো। কখনও মোলাস্কা, কখনও মাংসাশী হার্প স্পঞ্জ – প্রতিটি আবিষ্কার আমাদের বিস্মিত করে।
গবেষকদের ধারণা অনুযায়ী , গভীর সমুদ্র এখনও অসংখ্য গোপন রহস্য লুকিয়ে রেখেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, খনিজ আহরণ আর দূষণের কারণে এই অজানা প্রাণীরা আজ হুমকির মুখে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাদের পরিচয় জানা জরুরি। কারণ এরা শুধু সমুদ্র নয়, পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের ভবিষ্যৎ রক্ষার মূল চাবিকাঠি।
সূত্র: “Descriptions of Three Newly Discovered Abyssal Snailfishes (Liparidae) from the Eastern Pacific Ocean” by Mackenzie E. Gerringer, Sarah Suplicz, et.al; 27 August 2025, Ichthyology & Herpetology.
DOI: 10.1643/i2024069