অতিক্ষুদ্র, অতিলঘু, অতিশক্তিশালী

অতিক্ষুদ্র, অতিলঘু, অতিশক্তিশালী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সফলভাবে কার্বনঘটিত ইস্পাতের অমিত শক্তির সাথে স্টাইরোফোমের মতো হালকা জিনিসের বৈশিষ্ট্যগুলিকে একত্রিত করে ন্যানো-স্থাপত্য কৌশলে নির্মিত সামগ্রীর বিকাশের জন্য একটি যুগান্তকারী পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। মেশিন লার্নিং-এর উদ্ভাবনী প্রযুক্তির মাধ্যমে লব্ধ তাঁদের এই গবেষণার ফল একাধিক শিল্পক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে। বিশেষ করে সেইসব ক্ষেত্রে যেখানে শক্তি এবং ওজন দুটোই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। যেমন যাঁরা মহাকাশ এবং স্বয়ংচালিত প্রকৌশলের মতো উন্নত উপকরণের উপর নির্ভরশীল। সম্মানিত জার্নাল ‘অ্যাডভান্সড মেটিরিয়ালস’-এ প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে অধ্যাপক টোবিন ফিলেটারের নেতৃত্বে গবেষণা দলটি অন্তর্দৃষ্টি সহকারে দেখিয়েছেন, কীভাবে তাঁরা এইসব উপাদান গড়ে তুলেছেন। এগুলি শক্তি, লঘুত্ব, এবং নির্দিষ্ট প্রয়োজন-সাধক বৈশিষ্ট্যগুলিকে অনন্যভাবে এক জায়গায় এনেছে। এ গবেষণা মেটিরিয়াল্‌স বিজ্ঞানের একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার মোকাবিলা করেছে। ন্যানো-স্থাপত্য কৌশলে নির্মিত এইসব সামগ্রী ছোট ছোট পুনরাবৃত্তিকারী ইউনিট ব্যবহার করে, যেগুলি আকারে কখনও কখনও মানুষের একটি চুলের ভগ্নাংশের চেয়েও ছোটো, অথচ এত হালকা হওয়া সত্ত্বেও প্রচুর যান্ত্রিক লোড সহ্য করতে সক্ষম।
এর পিছনের নীতিগুলি স্ট্রাকচারাল মেকানিক্সের উপর খুব বেশি ভাবে নির্ভর । এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য, গবেষক-দলটি কার্যকরভাবে মেশিন লার্নিংকে উদ্ভাবনী জালিকা (ল্যাটিস) জ্যামিতি ডিজাইন করার একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছেন। এই কৌশলগত সিদ্ধান্তটির উদ্ভব হয়েছিল মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমগুলির বিশাল ডেটা সেট বিশ্লেষণ করে এবং সর্বোত্তম সমাধানগুলি সনাক্ত করার সম্ভাব্যতাকে স্বীকৃতি দিয়ে। উপকরণ ডিজাইনের সাথে জড়িত জটিলতার মোকাবেলায় এই অ্যালগরিদ্‌মটি উপযুক্ত। এটিকে অধ্যয়নের জন্য বিশেষভাবে তৈরি অ্যালগরিদমটি একটি বহু-উদ্দেশ্যসাধক ‘বায়েসিয়ান অপ্টিমাইজেশান সিস্টেম’। এটি কার্যকরভাবে সিমুলেটেড (অনুকৃত) জ্যামিতি থেকে স্বশিক্ষিত হতে পারে। ফলস্বরূপ, এটি পীড়নবলকে আরও সমানভাবে বিতরণ করতে পারে এবং সামগ্রিক শক্তি বাড়ানোর পক্ষে সবচেয়ে কার্যকর জালিকা নকশাগুলির পূর্বাভাস দিতে পারে। এই প্রযুক্তিটি অমূল্য কারণ এটিকে প্রয়োগ করে গবেষকরা মাইক্রোস্কেল এবং ন্যানোস্কেল উভয় ক্ষেত্রেই জটিল কাঠামো তৈরি করতে পারবেন। এই ধরনের গবেষণার প্রভাব পরীক্ষাগারের বাইরেও প্রসারিত। মহাকাশ ক্ষেত্রে এই নতুন ডিজাইন করা উপকরণ থেকে প্রাপ্ত হালকা ওজনের উপাদানগুলির সুবাদে উল্লেখযোগ্য জ্বালানি সাশ্রয় হবে। গবেষকরা অনুমান করেছেন যে যদি বিমানে টাইটানিয়ামের তৈরি উপাদানগুলির বদলে যদি এই উন্নত ন্যানো-জালিকা উপকরণগুলি ব্যবহার করা হয়, তাহলে প্রতি কিলোগ্রাম পিছু ৮০ লিটার পর্যন্ত জ্বালানীর বার্ষিক সাশ্রয় হতে পারে। গবেষকরা আশা করছেন যে মেশিন লার্নিং-বর্ধিত ন্যানো-স্থাপত্যকৌশলে নির্মিত এই উপকরণগুলি মহাকাশে আরও দক্ষ ডিজাইনের পথ তো প্রশস্ত করবেই, উপরন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্র জুড়ে ভবিষ্যতে আরও অনেক উদ্ভাবনকে অনুপ্রাণিত করবে। কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি আর টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ডক্টরাল ক্লাস্টার প্রোগ্রামের সহযোগিতায় এই গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − thirteen =