
১৯২৫ সালে অস্ট্রিয়া-জাত পদার্থবিজ্ঞানী ভল্ফগ্যাং পাউলি দেখিয়েছিলেন, দুটো ইলেকট্রন কখনো একই দশায় একই সঙ্গে থাকতে পারে না। খুব কাছাকাছি চলে এলেই তাদের মধ্যে একটা বিকর্ষণ বল কাজ করে। এই কারণেই পরমাণুর কেন্দ্রকের মধ্যে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরতে-থাকা ইলেকট্রনেরা ধসে না-পড়ে যে-যার কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। দেখা গেল, শুধু ইলেকট্রন নয়, আরও কিছু কণা এই নিয়ম মেনে চলে। যারা এ নিয়ম মেনে চলে তাদের বলা হল ফের্মিয়ন। আর যারা এ নিয়ম মেনে চলে না তাদের বলা হল বোসন। এতদিন জানা ছিল, তামাম বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এই দু ধরনের কণা দিয়ে তৈরি: ফের্মিয়ন আর বোসন। এনরিকো ফের্মির নামে ফের্মিয়ন আর সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে বোসন। এখন দেখা যাচ্ছে ফের্মিয়ন আর বোসন ছাড়া অন্য দুই ধরণের কণারও অস্তিত্ব আছে। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিটের ঝিয়ূয়ান ওয়াং আর আমেরিকার হুস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাদেন হাজার্ড এই দুই পদার্থবিজ্ঞানী এক নতুন ধরণের কণার নাম দিয়েছেন ‘প্যারাপার্টিক্ল’ – বাংলায় বলতে পারি অধিকণা। এদের ধর্ম ফের্মিয়ন আর বোসনের চেয়ে আলাদা। এদিকে অন্য এক গবেষণা থেকে ‘এনিয়ন’ (anyon, অজানা কণা) নামে আরেক ধরনের কণার অস্তিত্বের পরীক্ষাভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। একটি একমাত্রিক ভার্চুয়াল ব্রহ্মাণ্ডে তার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে। অধিকণাগুলির সঙ্গে ফের্মিয়নের একটি ধর্মর মিল আছে। সেটা এই যে, দুটি অধিকণা একবার জায়গা বদলাবদলি করার পর যখন আবার অবস্থান বদল করে তখন তাদের আদি দশায় ফেরত আসে। কিন্তু অজানা কণাগুলির ধর্ম আলাদা; তারা আদি অবস্থানে ফিরে আসবার পরও তাদের কোয়ান্টাম দশা আর আগের অবস্থায় ফেরে না। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পদার্থবিদ জয়েস কোয়ান আর মার্কাস গ্রেইনের এবং তাদের সহকর্মীরা একটি রুবিডিয়াম- ৮৭ আইসোটোপ নিয়ে কাজ করে এই অজানা কণার অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন। দুটি অজানা কণা জায়গা বদলাবদলি করলে তাদের ওয়েভ ফাংশনগুলি তারা কীভাবে বদলাল সেটা ‘মনে রাখতে’ পারে। ফলে তথ্য-সংকেত রচনার কাজে তারা খুবই পটু হয়ে উঠতে পারে। অজানা কণাদের এই মনে-রাখার ধর্মকে এরই মধ্যে কাজে লাগিয়েছেন গুগ্ল সংস্থার পদার্থবিদরা, এবং আরও কেউ কেউ। অধিকণারা (প্যারাপার্টিক্ল) অবশ্য অজানা কণাদের (এনিয়ন) মতো অত জবরদস্ত নয়। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্রিয়ায় তারাও কাজে লাগতে পারে। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, অজানা কণারা ত্রিমাত্রিক অবস্থাতেও বিরাজ করতে পারে। ওয়াং বলছেন, তত্ত্বগতভাবে হয়তো এখনো অনাবিষ্কৃত আরও কিছু মৌল কণার ধর্ম এই অধিকণার মতো হতে পারে। প্যারাপার্টিক্ল আর এনিয়ন কণার অদ্ভুত আচরণের দৌলতে তারা ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ভুলের মাত্রা কমিয়ে আনার কাজে খুব উপযোগী হয়ে উঠতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের আশা।