বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা অনুকরণমূলক আচরণের পেছনে স্নায়বিক প্রক্রিয়া অন্বেষণ করেছেন। অনুকরণমূলক আচরণ মিথস্ক্রিয়া এবং সামাজিক সংহতি সহজ করে এবং মানুষকে অন্যদের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিশতে দেয়। ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস (PNAS)-এর প্রসিডিংস-এ প্রকাশিত এই গবেষণা মস্তিষ্ক কীভাবে এই আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে, আর এর ক্লিনিকাল ও থেরাপিউটিক অ্যাপ্লিকেশনের দিক সম্বন্ধে জানিয়েছে। মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি কাজে লাগিয়ে কীভাবে অনুকরণমূলক আচরণ বাড়ানো বা কমানো যায় এবং কাজের পারফরম্যান্সের সময় যাতে প্রতিন্ধকতা এড়ানো যায়, গবেষকদের অনুসন্ধান সে সম্পর্কে নতুন দিশা দেখাচ্ছে।
অনেক জটিল সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় অনুকরণমূলক আচরণ দেখা যায়। এটা আন্তর্ব্যক্তিক সম্পর্ক ও গোষ্ঠীর সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। স্বয়ংক্রিয় অনুকরণের খারাপ পরিণতি হতে পারে আর বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। যেমন একটা পেনাল্টি কিক বাঁচাতে, যদি একজন গোলরক্ষক ফরোয়ার্ডের গতিবিধি অনুকরণ করতে থাকেন, তাহলে তিনি আর গোল খাওয়া থেকে বাঁচতে পারবেন না। স্বয়ংক্রিয় অনুকরণ দৈনন্দিন জীবনের সার্বজনীন আচরণ। যেমন আমরা কাউকে হাই তুলতে দেখলেই অবিলম্বে হাই তোলার তাগিদ অনুভব করি। অথবা দেখি কথা বলার সময় আমাদের কথাবার্তা বা মুখের অভিব্যক্তি আমরা যে বন্ধুর সাথে কথা বলছি তার সাথে খাপ খাচ্ছে। এই বিষয়ে জানলে আমাদের সামাজিক আচরণের দিক বোঝা যাবে।
মস্তিষ্কের মধ্যে কিছু না প্রবেশ করিয়েও ব্রেন স্টিমুলেশন পদ্ধতিতে স্নায়বিক যোগসূত্র থেকে মস্তিষ্কের স্থিতিস্থাপকতা দেখা হয়েছিল। বিভিন্ন মোটর অঞ্চলের যোগাযোগে বাধা দিয়ে বা উদ্দীপনার সাহায্যে দেখা হয়েছিল কীভাবে মস্তিষ্ক অনুকরণমূলক আচরণে যুক্ত। এই গবেষণার জন্য ৮০ জন সুস্থ অংশগ্রহণকারীকে চারটি দলে ভাগ করা হয়েছিল। তাদের দুটো কাজ দেওয়া হয়েছিল, একটা ঐচ্ছিক অনুকরণের কাজ অন্যটা স্বয়ংক্রিয় অনুকরণের কাজ। ফলাফল দেখিয়েছে যে মোটর অঞ্চলের বিভিন্ন সার্কিটগুলো স্বতন্ত্র এবং বিচ্ছিন্ন সামাজিক ফাংশন করে। মোটর অঞ্চলের দুটো অংশে যোগাযোগ বাড়ালে অনুকরণের প্রবৃত্তি বাড়ে। গবেষকরা জানিয়েছেন যাদের স্নায়বিক বৈকল্য বা সোশ্যাল ডিসফাংশান সিন্ড্রোম রয়েছে, এই গবেষণা সেই রোগীদের জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা উন্নত করতে ও থেরাপিউটিক অ্যাপ্লিকেশনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।