অন্ত্রে মল রূপান্তরের সময়সীমা 

অন্ত্রে মল রূপান্তরের সময়সীমা 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

আমরা সাধারণত খাবার ভালো খাচ্ছি কি না,জল ঠিকমতো পান করছি কি না , এসবের দিকে নজর দিই। কিন্তু একেবারও কি আমরা ভেবে দেখি মানুষের পরিপাকতন্ত্রে খাবার থেকে মল পর্যন্ত পৌঁছানোর যাত্রাটি যত দ্রুত বা ধীরে ঘটে, তা স্বাস্থ্যের ওপর কতটা গভীর প্রভাব ফেলতে পারে? সাম্প্রতিক এক গবেষণা এই উপেক্ষিত বিষয়টির ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে।

২০২৩ সালের এক বিস্তৃত পর্যালোচনা-গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের অন্ত্রে মল খুব দ্রুত এগোয় এবং যাদের ধীরে—এই দুই শ্রেণির মানুষের অন্ত্রের অনুজীব পরিমণ্ডলে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আর যেহেতু অনুজীব পরিমণ্ডল আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত, তাই এই পার্থক্যের তাৎপর্য যথেষ্ট বড়।

মল দীর্ঘ সময় আটকে থাকা—শুধু কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো অস্বস্তিই বাড়ায় না; গবেষকরা এটিকে বিপাকীয় অসঙ্গতিজনিত প্রদাহ, এমনকি পার্কিনসনস রোগের প্রাথমিক লক্ষণ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে বলে ইঙ্গিত করছেন। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মল অন্ত্রে কতক্ষণ থাকে এবং কারও অন্ত্রের এই দৈনিক গতি–ছন্দ বোঝা গেলে আরও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ও খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা সম্ভব।

অন্ত্রে মলের অবস্থানের সময়সীমা পরিমাপের পদ্ধতিও বৈচিত্র্যময়। কখনও ব্যবহার করা হয় বিশেষ সেন্সরযুক্ত ক্যাপসুল; কখনও ব্রিস্টল স্টুল স্কেল, যা মলের ধরন দেখে মল রূপান্তরের সময়ের ধারণা দেয়। কেউ কেউ এমনকি নীল রং বা ভুট্টা খেয়ে দেখে কতক্ষণে মল শরীর থেকে বের হয়। উদ্দেশ্য একটাই—খাবার কোলোনে কতক্ষণ থাকে তা নির্ণয় করা। কারণ সময় যত বাড়ে, ব্যাকটেরিয়া ফারমেন্টেশন, অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন বিপাকজাত পদার্থ তৈরির সুযোগও তত বেশি পায়—যা ভালো বা খারাপ উভয় প্রভাব ফেলতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের মল দ্রুত বেরিয়ে যায়, তাদের অন্ত্রে সাধারণত কার্বোহাইড্রেট-ভিত্তিক খাদ্য- প্রিয়, দ্রুতবর্ধনশীল ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য থাকে। আর যাদের মল নিষ্কাশনের গতি ধীর, তাদের অন্ত্রে প্রোটিন-খাদক ব্যাকটেরিয়া বেশি দেখা যায়। আশ্চর্য হলেও সত্য—উভয় ক্ষেত্রেই অণুজীব সমগ্রর বৈচিত্র্য কমে যায়, অথচ স্বাস্থ্যকর অন্ত্র মানে সর্বদাই বৈচিত্র্যময় ব্যাকটেরিয়ার সমন্বয়।

এমন পরিস্থিতি তৈরি করে এক ধরনের গোপন চক্র, যেখানে ব্যাকটেরিয়া এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে যা তাদেরই বৃদ্ধি বজায় রাখে। তাই একই খাবার দুজন মানুষ ভিন্নভাবে হজম করেন, কিংবা একই প্রোবায়োটিক কারও ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করলেও অন্য কারও ক্ষেত্রে একদমই করে না।

সব মিলিয়ে গবেষকদের বক্তব্য হল, শুধু কী খাচ্ছেন তা নয়, আপনার শরীর কী গতিতে তা প্রক্রিয়াজাত করছে, সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে অন্ত্রে মল রূপান্তরের জন্য কত সময় লাগছে সেটা ব্যক্তিগত খাদ্যপরামর্শ, চিকিৎসা পরিকল্পনা ও রোগ প্রতিরোধ নীতিতে বড় ভূমিকা নিতে পারে।

সূত্র : How Long Poop Stays in Your Body Could Impact Your Health, Study Finds published in 2023 in the journal Gut, 2nd December 2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − seven =