
সম্প্রতি শিশুদের ক্রমবর্ধমান অপুষ্টির হার কেনিয়ার জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রায় সাড়ে তিন লাখ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। এই অপুষ্টি শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে, হয়তো অকালমৃত্যুও ডেকে আনছে। কিছু অঞ্চলে এই অপুষ্টির হার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
এই সংকট মোকাবিলায় আমেরিকা ও কেনিয়ার কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কেনিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(কৃ বু)চালিত মডেল তৈরি করেছে যা ছয় মাস আগে অপুষ্টির পূর্বাভাস দিতে পারে। আগে পুষ্টিহার শুধু অতীতের ডেটা(উপাত্ত) বিশ্লেষণ করে দেখা হতো, কিন্তু এই মডেলটি আরও বেশি জটিল ডেটা( উপাত্ত) বিশ্লেষণ করতে পারে।এই ডেটা (উপাত্ত ) আসে কেনিয়ার জেলা স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা থেকে, যেটি সারা দেশজুড়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এছাড়াও নাসার Moderate Resolution Imaging Spectrocardiometer(MODIS) দ্বারা গৃহীত উপগ্রহ চিত্র ফসলের উৎপাদনশীলতা এবং মোট প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা নির্ধারণ করে দেখে ফলন কতটা বাড়ছে। এটি মূলত খাদ্য নিরাপত্তার একটি সূচক। দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলে ফসলের মান অনুন্নত সেই সব অঞ্চলেই অপুষ্টির প্রভাব বেশি।এই মডেলটি ১৭০০০ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রেকর্ড এবং ফসলের স্বাস্থ্যসম্পর্কিত উপগ্রহ ডেটা( উপাত্ত) একত্রিত করে বিশ্লেষণ করে দেখেছে কোথায় অপুষ্টির হার বাড়তে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে মডেলটি একমাসে ৮৯% এবং ছয় মাসে ৮৬% নির্ভুল পূর্বাভাস দিয়েছে, যা আগের মডেলগুলোর গণনার সাপেক্ষে অনেক উন্নত। আগ্রহের ব্যাপার এই যে, GPP ডেটা প্রায় স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ডেটার( উপাত্ত) মতোই কার্যকরী হয়েছে। যেখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডেটা( উপাত্ত) সীমিত সেখানে উপগ্রহ চিত্র একটা গুরুত্বপুর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে।
কেনিয়ায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর ৫% তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে এবং টাড়াকানা ও কুরিয়ার পশ্চিমদিকে অপুষ্টির হার ১৫%-এরও ওপরে । এই মডেলগুলি এমন এমন ঝুঁকিপুর্ণ অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করেছে যেখানে সরকারের ও মানবিক সংস্থাগুলোর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কেনিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য হল এই কৃ বু উপকরণটিকে সিদ্ধান্তগ্রহণের নিয়মিত অংশ করা এবং যেসব অঞ্চলের শিশুরা কখনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যায়নি সেই সব শিশুদের কাছে সহজে পৌঁছানো।
বর্তমানে এই মডেলটির ব্যাপক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের ১২৫টি দেশ DHIS2 ব্যবহার করে , যার মধ্যে ৮০টি দেশেরই শিশুর অপুষ্টি মারাত্মক এক সমস্যা । যদি এই মডেলটি কেনিয়ার শিশুদের অপুষ্টি সংক্রান্ত আগাম সতর্ক বার্তা দিতে পারে তাহলে এটি অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও কার্যকরী হতে পারে, আর এই প্রচেষ্টাতেই রত আছেন গবেষকরা। তাঁদের লক্ষ্য হল কেনিয়ার হাত ধরে অন্যান্য দেশেও মডেলটিকে ছড়িয়ে দিয়ে এটিকে বৈশ্বিক কাঠামোতে পরিণত করা, যা অপুষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে বহু শিশুর জীবন রক্ষা করবে এবং অপুষ্টি সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করবে।