অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার বনাম প্রত্যাশিত আবিষ্কার

অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার বনাম প্রত্যাশিত আবিষ্কার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫

বহু বড়ো বড়ো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ঘটেছে অপ্রত্যাশিতভাবে। জানলা দিয়ে হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে-আসা ছাতার কুচি থেকে আলেকজন্ডার ফ্লেমিং-এর পেনিসিলিন আবিষ্কার তার সুপরিচিত উদাহরণ। এরকম অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারের শতকরা সংখ্যা কত? এ নিয়ে একটি পরিসংখ্যানগত সমীক্ষা করা হয়েছে কৃ বু-কে কাজে লাগিয়ে। ইংল্যান্ডের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-রসায়নবিদ এবং সমাজবিজ্ঞানী ওহিদ ইয়াকুবের পরিচালনায় একাজ চলেছে। ২০০৯ থেকে ২০১৬-এর মধ্যে আমেরিকার গবেষণা মঞ্জুরি সংস্থার দেওয়া ৯০ হাজারটির বেশি অনুদান-প্রকল্প কাজে লাগিয়ে প্রকাশিত ১২ লক্ষেরও বেশি গবেষণাপত্র নিয়ে সমীক্ষা করেছেন তাঁরা। এই উদ্দেশ্যে তাঁরা একটি মেশিন লার্নিং অ্যলগরিদ্‌মকে কাজে লাগিয়েছেন। সেই অ্যলগরিদ্‌মটি ওইসব গবেষণাপত্রগুলির টেক্সটকে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন বিভাগে সাজিয়ে ফেলে। যথা ‘দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা’, ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ ইত্যাদি। এবার, ওইসব বিষয়ে গবেষণার ঘোষিত লক্ষ্য আর প্রত্যাশা কী ছিল তার সঙ্গে কার্যক্ষেত্রে লব্ধ ফলের একটি তুলনা করেন গবেষকরা। জীববিজ্ঞান-চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত প্রকাশনাগুলির প্রায় ৭০%-এর মধ্যে অন্তত একটি করে ফল পাওয়া গেছে যা ‘অপ্রত্যাশিত’। তাঁরা দেখেন, ৫৮% পেপারে অপ্রত্যাশিত সাফল্য পাওয়া গেছে। গড়পড়তায় বিজ্ঞানের যাবতীয় শাখা মিলিয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সাফল্যই অপ্রত্যাশিত। যে-অনুদানের অঙ্ক যত বড়ো, সেই গবেষণা থেকে অপ্রত্যাশিত সাফল্য লাভের সম্ভাবনা তত বেশি। ক্লিনিকাল গবেষণা কিংবা অসুখ সংক্রান্ত গবেষণায় অপ্রত্যাশিত ফলের মাত্রা অপেক্ষাকৃত কম। আর মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি। যেসব ক্ষেত্রে গবেষণার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছিল সেসব ক্ষেত্রেই অপ্রত্যাশিত সাফল্যের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সে তুলনায় অনুসন্ধানকারীরা নিজেরা যেসব গবেষণা শুরু করেছিলেন সেখানে এর মাত্রা কম। গবেষণার নীতি-নির্ধারণের ব্যাপারে এই সমীক্ষা থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশ পাওয়া যাচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত মৌলিক গবেষণা আর ফলিত গবেষণা অপ্রত্যাশিত সাফলের জন্য তৈরি থাকছে, যতক্ষণ বেখাপ্পা ফলগুলিকে চটজলদি বাতিল না-করছে, ততক্ষণ উভয় ক্ষেত্রেই অর্থ বরাদ্দ করা যুক্তিযুক্ত। নেদারল্যান্ডস-এর ডেফট বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন-বিশেষজ্ঞ সামাটা কোপ্ল্যান্ড এই অপ্রত্যাশিত সাফল্যের বিষয়টি নিয়ে চর্চা করেন। তিনি বলছেন, গবেষণায় আরও বেশি স্বাধীনতা দিলেই যে অপ্রত্যাশিত সাফল্য বেশি বেশি করে আসবে তা নয়, কিন্তু একথা ঠিক যে গবেষণার সময়সীমা আর অর্থবরাদ্দের নমনীয়তা আরও বাড়ালে গবেষকদের পক্ষে তার সুযোগ নেওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা কার্যক্ষেত্রে অর্থবরাদ্দ প্রক্রিয়াকে এমনভাবে সাজানোর চেষ্টা করছেন যাতে করে তার মধ্যে অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারের ক্ষেত্রগুলিকে ঠাঁই করে দেওয়া যায়। যে-ফল পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থবরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল, হুবহু সেই ফলই পাওয়ার বাধ্যবাধকতা বিশেষ করে পিএইচ ডি ছাত্রদের ওপর অস্বাভাবিক চাপ দেয়। ইয়াকুব ও তাঁর গবেষক দল অতঃপর দেখতে চাইছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রের গবেষকরা তাঁদের গবেষণাপত্রগুলিতে কতবার সরাসরি এই অপ্রত্যাশিত ফললাভের কথাটি উল্লেখ করেন এবং এবিষষে কী তাঁদের মনোভাব। https://doi.org/10.1038/d41586-025-00161-9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + eight =