অবহেলিত জাগুয়ারুন্ডি

অবহেলিত জাগুয়ারুন্ডি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ জুলাই, ২০২৫

দক্ষিণ মেক্সিকো থেকে উত্তর আর্জেন্টিনা। বিস্তৃত ঘন বন আর কাঁটাঝোপের মধ্যে দিয়ে নিঃশব্দে হেঁটে চলে এক অদ্ভুত প্রাণী। বিড়াল নয়, আবার জল ভোঁদড়ও নয়, এর নাম জাগুয়ারুন্ডি। এই রহস্যময় প্রাণীটি যেন বিড়ালের ছদ্মবেশে এক বন্য বাউণ্ডুলে। যার চেহারা বলে এক কথা আর গতিবিধি বলে অন্য কিছু। বিড়াল আর জল-ভোঁদড়ের সংকর এই জাগুয়ারুন্ডির পা ছোট, লেজ লম্বা সরু, চ্যাপ্টা মাথা। একেবারে নিঃশব্দ পদচারণা এদের। বড় পুমা বা আমেরিকান বনবিড়ালের আত্মীয় হলেও, জাগুয়ারুন্ডি গড়পড়তা বিড়ালের মতো নয়। বরং এরা বেশ খেলোয়াড় গোছের ছায়াযোদ্ধা। এদের শরীরের ছন্দ যেন গতির জন্যই গড়া। এই অদ্ভুত শারীরিক গঠন এগুলিকে শুধুমাত্র ভাল দৌড়বিদই তৈরি করে না, অসাধারণ সাঁতারুতেও পরিণত করে। জলে নামতেও তার কোন দ্বিধা নেই। মাছ, ব্যাঙ বা ছোট শিকার ধরতে সে দিব্যি জলে ডুব মারে—একেবারে ভোঁদড়ের মতনই। যদিও জাগুয়ারুন্ডি ১৯টি দেশের বনাঞ্চলে ছড়িয়ে আছে, তবুও এটি আজও বিজ্ঞানীদের কাছে এক অজ্ঞাত চরিত্র। এর গায়ে কোনো দাগছাপ নেই, নেই পরিচিত মুখের আদল। ফলে ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। আর এদের জীবনযাপন এতটাই গোপন যে, ক্যামেরা ট্র্যাপে ধরা পড়ে না বললেই চলে। উপরন্তু, ইন্টারন্যাশানাল ইউনিয়ন অফ কনজারভেনশন অফ নেচার বলছে, সংরক্ষণের তালিকায় এরা নেই বললেই চলে। তাই গবেষণার জন্য রসদ-বরাদ্দও খুব কম। সংরক্ষণ জীববিজ্ঞানী অ্যান্টনি জিওর্দানো ক্ষোভে বলেন, “জাগুয়ারুন্ডি নিয়ে গবেষণার জন্য কেউ টাকা দেবে না”, এটাই বাস্তবতা। তবে এতদিন ‘নিরাপদ’ তালিকায় থাকলেও, বাস্তবতা কিন্তু অন্যরকম। বন উজাড়, কৃষিভিত্তিক আগ্রাসন আর বাসস্থান টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া, এই সব কিছুই জাগুয়ারুন্ডির জন্য সংকট বয়ে আনছে। কিছু এলাকায় মুরগি শিকারের কারণে মানুষই এদের হত্যা করছে। আরও উদ্বেগের বিষয়, IUCN গত কয়েক বছর ধরে জাগুয়ারুন্ডির অবস্থা নতুন করে মূল্যায়নই করেনি। তথ্য না থাকলে, এবং এভাবে চলতে থাকলে এই রহস্যময় বিড়াল একদিন “বিপন্ন” তালিকায় তো যাবেই, কোনো ঘোষণা ছাড়াই। বলা যায় না চোখের সামনেই এগুলি কোনোদিন অদৃশ্য হয়ে যাবে হয়ত। জাগুয়ারুন্ডি শুধু ‘ বামন চিতা’ নয়, এ বাস্তুতন্ত্রের এক নির্দেশক। এর অস্তিত্বের সাথে একেকটি বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য জড়িয়ে রয়েছে। তাই এগুলির হারিয়ে যাওয়া মানে, একাধিক প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভেঙে পড়া। এই নিঃশব্দ আরণ্যক ছায়াযোদ্ধাকে নিয়ে নতুন গবেষণা, সংরক্ষণ, আর জনসচেতনতা এখন সময়ের দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + 11 =