অভিনব শব্দপ্রযুক্তি

অভিনব শব্দপ্রযুক্তি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ মে, ২০২৫

সমুদ্রতলের মানচিত্রায়নের ক্ষেত্রে নতুন Sonar প্রযুক্তি এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এখানে আলোর পরিবর্তে শব্দতরঙ্গ বস্তুর দূরত্ব, অবস্থান ও বস্তুকে শনাক্ত করতে পারে। এর ব্যবহার বিজ্ঞানীদের গবেষকদের বিস্মিত করেছে। SAS( Synthetic Aperture SONAR) নামক প্রযুক্তিটি প্রথমে সামরিক উদ্দেশ্যে বিস্ফোরক খনিগুলোকে শনাক্ত করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এটিকে ব্যবহার করছেন সমুদ্রতলের জীববৈচিত্র্য এবং ভূতাত্ত্বিক গঠন বিশ্লেষণের জন্য।
দেখা গেছে, সমগ্র বিশ্বব্যাপী গভীর সমুদ্রের সামান্য কিছু অংশ নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ হয়েছে। কিন্তু SAS প্রযুক্তি এই গবেষণার পরিসর আরও প্রসারিত করতে সাহায্য করবে। ফলে আরও বিস্তৃত এলাকা পর্যবেক্ষণ করা যাবে এবং সমুদ্রের তলার আরও সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা যাবে। এটি সামুদ্রিক খনিজ আহরণ ও পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
SAS এর কার্যপ্রণালী অনেকটা উপগ্রহ থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত SAR/ Synthetic Aperture Radar এর মতো। SAS শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকিছু বিশ্লেষণ করে , যা SONAR এর তুলনায় অনেক বেশি নির্ভুল তথ্য দিতে পারে।
এই নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কাছে সমুদ্রের তলদেশের গরমজলের উৎসগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন। এগুলো সমুদ্রের গভীরে জীবন ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় এমন কিছু উষ্ণপ্রস্রবণ ও সামুদ্রিক প্রাণী চিহ্নিত হয়েছে যা আগে জানা ছিল না। এছাড়াও ইজরায়েলের উপকূলে এক গবেষণায় SAS ব্যবহার করে সমুদ্রের নীচের পাথুরে ও বালুকাময় অংশের সুনির্দিষ্ট মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে , যা কিনা আবার সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্র্য বুঝতেও সাহায্য করবে। এমনকি গবেষকরা সেখানে শৈবালের উপস্থিতিও শনাক্ত করেছেন।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও খনিজ আহরণেও SAS প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। এটি সমুদ্রের অনেক গভীরে থাকা খনিজ সম্পদ চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেখানে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন কিনা তা বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করবে।
২০২১ সালে ইজরায়েলের সামুদ্রিক জীবের একটি প্রধান আবাসস্থল পাল্মাহিম ডিস্টারবেন্স অঞ্চলের খনিজ আহরণের জন্য বিজ্ঞানীরা SAS ব্যবহার করেন এবং এটিকে গভীর সামুদ্রিক হাঙরদের আবাসস্থল বলে চিহ্নিত করেন। ২০২২ সালে এই এলাকাটিকে সংরক্ষিত সামুদ্রিক অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়।
SAS এখনো পর্যন্ত রীতিমতো ব্যয়বহুল একটি প্রযুক্তি , যার ফলে এটিকে ব্যবহার করা গবেষকদের পক্ষে মুশকিল হয়ে পড়ছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে এর দাম সাধ্যের মধ্যে চলে আসবে। প্রথমদিকে এই প্রযুক্তি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খোঁজা এবং সমুদ্রের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্যই বেশি ব্যবহৃত হবে বলে গবেষকরা আশা করেন।এর ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেলে বিজ্ঞানীরা গভীর সমুদ্রের আরও বিশদ চিত্র তৈরি করতে পারবেন যা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ এবং উন্নয়নে সহায়ক হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + thirteen =