অভিবাসনের কথাই ভাবতে হবে- জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা

অভিবাসনের কথাই ভাবতে হবে- জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ আগষ্ট, ২০২৪
অভিবাসনের কথাই ভাবতে হবে

জলবায়ু সংকট প্রতি বছর গভীরতর হচ্ছে। এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও)-র সদ্য প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা গেল, ২০২৩ সালে জলবায়ু, আবহাওয়া এবং জল-সংক্রান্ত বিপর্যয় গোটা বিশ্বে এশিয়ার চেয়ে বেশি আর কোনও অঞ্চলে ঘটেনি। তাপপ্রবাহ থেকে বন্যা, ঝড়ঝঞ্ঝা— পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সংখ্যার বিচারে এবং তীব্রতার নিরিখে এ-যাবৎ বৃদ্ধি পেয়েছে গোটা বিশ্বেই। গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু সংকটের ফলে দ্রুত বৈশ্বিক পরিবর্তন ঘটছে। মানব জাতিকে তাই অভিবাসনের কথা ভাবতে হবে। গবেষকদের মতে উল্লেখযোগ্য অভিবাসন প্রত্যাশিত। কিন্তু দেশের সীমান্ত নীতি কঠোর হচ্ছে। তাই দেশ কালের বিভেদ ভুলে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। অভিবাসনের সুবিধা প্রচার করে বিশ্ব নেতারা মানুষ এবং সমাজের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পারেন। ওয়ান আর্থ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রটি ওয়াজেনিনজেন, এক্সেটার এবং নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু ও সমাজ বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন। ওয়াজেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্টেন শেফারের অনুমান আগামী দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ প্রায় দু বিলিয়ন মানুষকে চরম তাপমাত্রার মোকাবিলা করতে হবে। বিশ্বের নানা স্থানে যাতে মানুষ ছড়িয়ে যেতে পারে, বসবাস করতে পারে এই দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। না হলে এমন এক বিশ্বের সৃষ্টি হবে যেখানে না থাকবে শান্তি না থাকবে নিরাপত্তা। বিজ্ঞানীদের ভাষায় জিও-পলিটিকাল ইনস্ট্যাবিলিটি তৈরি হবে। দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে, বিঘ্নিত হবে শান্তি ও নিরাপত্তা। পরিবর্তে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নতুন বিশ্বে যাতায়াত এবং সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের লক্ষ্যে একত্রিত হতে হবে। আজ অবধি, বেশিরভাগ অভিবাসন দেশের মধ্যেই ঘটেছে। কৃষি উত্পাদনশীলতায় হ্রাস বা উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষয় বা কোনো চরম ঘটনার কারণে মানুষ সেই অঞ্চলগুলো ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে কিছু দেশ যা বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত সে সব দেশের অধিবাসীরা এই সমস্যা সমাধান করতে পারে, সেই দেশেরই ভিন্ন জায়গায় তার বাসা তৈরি করতে পারেন কিন্তু ছোটো দেশগুলোর ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। জীবজন্তুরা ইতিমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় তাদের ভৌগলিক বন্টন পরিবর্তন করছে, এবং মানুষ হাজার হাজার বছর আগে তা করেছে। তবে এখন মানুষের ক্ষেত্রে বাধা কিসে? গবেষকরা মনে করেন বিশ্ব উষ্ণায়ন বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলছে, বাসযোগ্যতাকে এই শতাব্দীর একটি প্রধান রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ করে তুলেছে। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে খাদ্য ব্যবস্থার সংস্কার ও শ্রমিকের বন্টন, প্রকৃতি সংরক্ষণ করেও উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে — বিশেষ করে যদি মাংসের তুলনায় উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যের চাহিদা বাড়ে । তাই অভিবাসন মানুষ ও জলবায়ু উভয়ের ক্ষেত্রেই ফলপ্রসূ হতে পারে। বিশ্বের প্রতিটি কোণে আসন্ন জলবায়ু সংকটের পূর্বাভাস দিতে হবে এবং পরিস্থিতির পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের নিরাপদ ও উপযুক্ত অঞ্চলে স্থানান্তরকে প্রচারে আনতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − four =