মায়ানমারের চাউং-গি-র এক বাজারে রত্নবিদ কিয়াও থু একটা পাথর কেনেন। পাথরটা বেশ ক্ষুদ্র, কমলা বাদামী আভাযুক্ত এই পাথরের ওজন এক গ্রামের মাত্র এক তৃতীয়াংশ, ১.৬১ ক্যারেট। পাথরের মাপ হল, ৫.৮ x ৪.৫৮ x ৩ মিলিমিটার। এই পাথরের নাম দেওয়া হয় কিয়াউথুয়েট। আমাদের প্রথম দর্শনে পাথরটা অ্যাম্বার বা পোখরাজ বলে ভুল হতে পারে। কিন্তু পাথর কেনার সময় তাঁর মনে হয়, এটা স্কাইলাইট নামে এক খনিজ দিয়ে তৈরি। পরে তিনি আবিষ্কার করেন, তাঁর নতুন কেনা পাথরের খনিজ এতটাই বিরল যে সমগ্র বিশ্বে এর একটাই মাত্র নমুনা যা তাঁর কাছে রয়েছে। জানা কিছুর সাথে পাথরের খনিজ মেলাতে না পেরে, তিনি এটিকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককের জেমোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট অফ আমেরিকা (জিআইএ) ল্যাবরেটরিতে পাঠান। সেখানে, খনিজবিদরা এই পাথরকে সিন্থেটিক BiSbO4 – বিসমাথ অ্যান্টিমোনেট হিসেবে শনাক্ত করেন। কিন্তু এর গঠন সজ্জা প্রকৃতিতে আগে দেখা যায়নি।
তিনি জানান পাথর কেনার সময় দোকানদার বলেছিল, এটা একটা অদ্ভুত পাথর। খসখসে পৃষ্ঠে ঘষলে পাথরের পাউডারের কমলা রঙ, তাতে লাল আভা, তার সাথে সাদা রেখা দেখা যাচ্ছিল। পাথরে ফাঁপা, টিউব-আকৃতির অন্তর্ভুক্তি রয়েছে যাকে এনইকেলন শিরা বলা হয়। এটা শিয়ার স্ট্রেস দ্বারা প্রাকৃতিকভাবে গঠিত হয়েছে। ভূতাত্ত্বিকরা মনে করেন পেগমাটাইট নামে সাধারণ আগ্নেয় শিলার এটা এক প্রকারের নমুনা। গ্রানাইটের মতো, পেগমাটাইটের গঠন যেন ফ্রুট কেকের মতো যেখানে বিভিন্ন খনিজ একত্রে মিশে থাকে। পেগমাটাইটে রত্নের বড়ো স্ফটিক পাওয়া যায়। কিয়াউথুয়েট পাথরে পেগমাটাইটের মতো, টাইটানিয়াম, নিওবিয়াম, টাংস্টেন এবং ইউরেনিয়ামের দেখা মেলে। পরীক্ষাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে, শীতল ম্যাগমার তাপমাত্রার সম তাপমাত্রায় বিসমাথ অ্যান্টিমোনাইট স্ফটিক গঠিত হয়। যেহেতু খনিজটা বেশ বিরল, তাই এটা কীভাবে গঠিত হয়েছে, এখনও জানা যায়নি।
কিয়াউথুয়েটের মান বর্তমানে অমূল্য হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বিরলতম রত্ন, পেনাইট নামক এক খনিজ, যার মূল্য প্রতি ক্যারেটে ৫০০০০ থেকে ৬০০০০ মার্কিন ডলার। তবে, বিশ্বের একমাত্র পরিচিত এই অমূল্য কিয়াউথুয়েট বর্তমানে লস এঞ্জেলেস কাউন্টির ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে নিরাপদে রাখা হয়েছে।