অরণ্য নিধনে তাপমাত্রা বাড়ছে

অরণ্য নিধনে তাপমাত্রা বাড়ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ আগষ্ট, ২০২৪

পূর্ব আফ্রিকার মন্টেন অরণ্যে পাহাড়ী ক্রান্তীয় আর্দ্র বনের পরিবেশ দেখা যায়। এই ইকোরিজিয়ন দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা, কেনিয়া এবং তানজানিয়ার পাহাড়ে ২০০০ মিটারের ওপরে কয়েকটা পৃথক এলাকা নিয়ে গঠিত। আফ্রিকার পাহাড়গুলোতে এই মন্টেন অরণ্য মেঘলা, আর্দ্র, ঠান্ডা হয়। জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই অরণ্য কুয়াশা এবং মেঘ থেকে জল আটকে জলের টাওয়ার হিসাবে কাজ করে, যা আফ্রিকার নিম্নভূমিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য উচ্চমানের বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করে। গত দুই দশকে, গাছ কেটে বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় আফ্রিকার এই পাহাড়ী বনের ১৮% হারিয়ে গেছে, এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উষ্ণতা বেড়েছে আর মেঘের স্তর দুগুণ ওপরে উঠে গেছে। কেনিয়া, তানজানিয়া, ইথিওপিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উচ্চভূমিতে এই নিয়ে গবেষণা করা হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে এখানকার বাতাসের তাপমাত্রা ১.৪০ সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে। আর গত ২০ বছরে মেঘের স্তর ২৩০ মিটার ওপরে উঠে গেছে। এর ক্ষতিকর পরিণতি পড়েছে জল সম্পদ আর জীববৈচিত্র্যে। এই গবেষণা নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত হয়েছে।

মেঘের স্তর উঁচুতে উঠে যাওয়ার ফলে জল আহরণ কমে গেছে। আগে মেঘ যখন বনে গাছের ছাউনি স্পর্শ করত তখন কুয়াশার জল গাছপালা, জমির উপরভাগে জমা হত। পাহাড়চূড়া গাছে ঢাকা থাকলে ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায় আর বনে, খোলা জমির চেয়ে গাছ এবং মাটিতে বেশি জল সঞ্চিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে টাইটা পাহাড়ের অরণ্যে খোলা মাটির তুলনায় ২০% বেশি জল জমা হত। কুয়াশার আকারে গাছে জল জমা হত, পরে তা টুপটাপ করে মাটিতে খসে পড়ত। কিন্তু গাছ কাটার পর এই অঞ্চলের জলসম্পদ, জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। এই নিয়ে জরুরী পদক্ষেপ প্রয়োজন কারণ শস্যভূমি সম্প্রসারণ, পাহাড়ী বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় জীববৈচিত্র্য ও আফ্রিকায় জল সরবরাহের মতো বাস্তুতন্ত্রের পরিষেবাগুলোর জন্য গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার টেমসজেন। এই গবেষণা দলে হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়, মারবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির বেরেউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ফিনিশ আবহাওয়া ইনস্টিটিউট, ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবেবা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নর্থ-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ছিলেন।