অস্টেলিয়ার ভূচিত্রে বদল আসন্ন?

অস্টেলিয়ার ভূচিত্রে বদল আসন্ন?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ এপ্রিল, ২০২৫

চিত্র ১: পশ্চিম কুইন্সল্যান্ড-এ ব্যাপক বন্যার ছবি। ২৯ মার্চ

মার্চের শেষদিকে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে তুমুল আকাশভাঙা বৃষ্টি হয়েছিল। এক সপ্তাহে যা বৃষ্টিপাত হয়েছে তা এক বছরের বৃষ্টিপাতের পরিমাণেরও বেশি। এই বিপর্যয়ে ওই অঞ্চলের হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা জলের তলায়, চারণভূমিগুলি জলে ভেসে গেছে, শহরগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, হেলিকপ্টারে করে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। খানিকটা আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলেও অপারেশনাল ল্যান্ড ইমেজার ২৯ তারিখে ওয়ান্ডোরা শহরের ওপর থেকে ওই অঞ্চলের মোটামুটি পরিষ্কার উপগ্রহ-চিত্র তুলেছে (চিত্র ১)। নাসার টেরা উপগ্রহের মডারেট রেজোলিশন স্পেক্ট্রো-রেডিওমিটার ক্যামেরায় ২৯ মার্চ-এ তোলা ওই ছবিতে (চিত্র ১), জলকে কালো আর হালকা নীল রঙ দিয়ে, অনাবৃত মাটিকে বাদামি রঙ দিয়ে আর গাছপালাকে উজ্জ্বল সবুজ রঙ দিয়ে দেখানো হয়েছে। এর আগে ৫ মার্চ-এ তোলা ওই অঞ্চলের বন্যা-পূর্ববর্তী অবস্থার আর একটি উপগ্রহ-চিত্রর সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে তফাতটা বোঝা যাবে (চিত্র ২)।

চিত্র ২: বন্যার আগে ৫ মার্চে তোলা ছবি

২৯ মার্চ শেষ-হওয়া সপ্তাহে ওই রাজ্যে ৪০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি পড়েছিল। আকাশ থেকে তোলা ছবি দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায়, কুইন্সল্যান্ড জুড়ে লক্ষাধিক পশু হয় বেপাত্তা নাহয় মৃত। ‘চ্যানেল কান্ট্রি’ নামে অভিহিত এই অঞ্চলটি চরম খরা আর চরম বৃষ্টিপাতের জন্য সুপরিচিত। এর আগে ১৯৭৪ সালে অস্টেলিয়ায় যে অভূতপূর্ব বন্যা হয়েছিল তাকেও ছাপিয়ে গেছে এবারের শেষ-মার্চের এই বৃষ্টি আর বন্যা। এবারের এই বৃষ্টি আর প্লাবন পূর্বের চরমতম অবস্থাকেও হার মানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর বেশ কয়েকটা কারণ আছে। তার মধ্যে একটা হল, উত্তর আর পূর্ব দুদিক থেকে জোলো হাওয়া এসে কুইন্সল্যান্ডের ভিতরদিকে জড়ো হয়। নিম্নচাপের একটা লম্বা আর সরু এলাকা সেই জোলো হাওয়াকে ঠেলে নিয়ে যায় উচ্চতর আর শীতলতর বায়ুস্তরে, আর তারই ফলে অঝোরে বৃষ্টি নামে। এবার সামনের কয়েক সপ্তাহ আর মাস জুড়ে এই জল ‘কাটি ঠান্ডা লেক আয়ার’ নামে অভিহিত জলাশয়ের দিকে ধাবিত হবে। এটি হল অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের নিম্নতম প্রাকৃতিক বিন্দু। বছরের বেশির ভাগ সময় এটি শুকনো থাকে। কয়েক বছর পরপর এটিতে জলের প্রবাহ আসে, কিন্তু সচরাচর এটি জলে পুরো ভরে যায় না। ২০১৯ সালের অস্বাভাবিক বৃষ্টির পর অস্ট্রেলিয়ার আবহবিভাগ হিসেব করে দেখেছিল, সে অবস্থাতেও সব মিলিয়ে ওই জলাশয় ভরে যায়নি, ৮০% জলে ভরে গিয়েছিল। এবার কিন্তু পরিস্থিতি অন্যরকম। হয়তো এর ফলে অস্ট্রেলিয়ার ভূমিক্ষেত্রে নাটকীয় পরিবর্তন হতে চলেছে।
সূত্র NASA EARTH OBSERVATORYAPRIL 4, 2025. NASA Earth Observatory images by Michala Garrison, using Landsat data from the U.S. Geological Survey and MODIS data from NASA EOSDIS LANCE and GIBS/Worldview.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − seven =