
একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আসার কারণে অস্ট্রেলিয়ার মানুষকে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে ও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেড ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় শুক্রবার শক্তিশালী ঝড়ো বাতাসে বিদ্যুৎ লাইন ভেঙে পড়ে।সরকারী পূর্বাভাস অনুযায়ী, গত শুক্রবার বিকেল নাগাদ সাইক্লোনটি ব্রিসবেন শহর থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে ছিল এবং খুব ধীর গতিতে উপকূলের দিকে এগোচ্ছিল।কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসের সীমান্তবর্তী ৪০০ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৪ কোটি মানুষ বিপদে রয়েছে।এই এলাকায় বহু বছর কোনো বিপজ্জনক ঘূর্ণিঝড় হয়নি।শেষবার এখানে ৫০ বছর আগে একটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল ।এখনও পর্যন্ত মারা যাওয়ার কোনো খবর নেই, তবে একজন ব্যক্তি নিখোঁজ। পুলিশ জানিয়েছে, লোকটি গাছের আড়ালে আশ্রয় নিয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে গাছ শুদ্ধ তার গাড়ি একটি সেতু থেকে নদীর স্রোতে ভেসে গেছে।ঘূর্ণিঝড়ের সাথে ভারী বৃষ্টিপাতে এলাকা জুড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রবল ঝড়ে গাছ ভেঙে বিদ্যুৎ লাইন ভেঙে গেছে। এর ফলে কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রায় ৮০,০০০ বাড়ি বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। উদ্ধারকারী দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দ্রুত কাজ করে চলেছে ।কুইন্সল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্রিসাফুলি বলেছেন, ঝড়টি ইতিমধ্যেই প্রবল ক্ষতি করেছে , এবং শনিবার সকালে এটি উপকূলে পৌঁছালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।এ এফ পি এর ছবিতে দেখা গেছে, গোল্ড কোস্টের পয়েন্ট ডেঞ্জারে একটি সাদা নৌকা ঝড়ের কারণে নোঙর ছিঁড়ে পাথরের মধ্যে ধাক্কা খেয়েছে।কুইন্সল্যান্ড অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা জানিয়েছে, গ্রামীণ কারাম্বিন উপত্যকায় একটি বড় গাছ বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়লেও দুইজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন।জরুরি পরিষেবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই এলাকায় প্রায় ১০,০০০ মানুষকে জায়গা খালি করে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।বিশেষভাবে লিসমোর শহর নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে, কারণ ২০২২ সালে ভারী বৃষ্টিতে এই শহর ১৪ মিটার (৪৫ ফুট) জলের নিচে ডুবে গিয়েছিল।অনেক মানুষ গত তিনদিন ধরে বালির বস্তা দিয়ে ঘর মজবুত করেছেন, আসবাবপত্র শক্ত করে বেঁধেছেন এবং খাবার-জল মজুত করে রেখেছেন।কুলাঙ্গাটার বাসিন্দা পল ফ্যারো জানিয়েছেন , অনেক মানুষ দুশ্চিন্তায় আছে, কারণ কেউ জানে না ভবিষ্যতে কী হবে। তিনি মজা করে বলেন, হয়তো মদের দোকান এক-দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। টিকে থাকার জন্য তিনি কিছু পিচ ফল, কয়েক কার্টন বিয়ার এবং এক ব্যাগ আঙুর মজুত করে রেখে দিয়েছেন। “আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেড শনিবার উপকূলে আঘাত হানতে পারে, তবে এর গতিপথ ঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছে না।ঝড়টি ব্রিসবেনের উত্তরের কোনো এলাকায় আছড়ে পড়তে পারে। এটি যতই উপকূলের কাছে আসবে, তত ভারী বৃষ্টি, শক্তিশালী ঝড়ো বাতাস এবং উচ্চ জোয়ার হবে। শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার কুইন্সল্যান্ড রাজ্য ও উত্তর নিউ সাউথ ওয়েলসের কিছু অংশে ৯০০-এর বেশি স্কুল বন্ধ ছিল। অনেকে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার উত্তরের উষ্ণ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় হওয়া স্বাভাবিক হলেও দক্ষিণের ঠান্ডা জলে সাইক্লোন তৈরি হওয়া খুবই বিরল। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ১৯৭৪ সালের পর এই এলাকায় এটি প্রথম সাইক্লোন ।গবেষকরা জানিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দাবানল, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা বাড়ছে।